স্পোর্টস ডেস্ক : কাগজে-কলমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের চেয়ে এগিয়েই ছিলো ফরচুন বরিশাল। তবে চট্টগ্রাম অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ বলেছিলেন, মাঠের ক্রিকেটে যারা ভালো খেলবে তারাই হাসবে শেষ হাসি। সে অনুযায়ী ব্যাটিংয়ে না হলেও, বোলিংয়ে ঠিকই নিজের সেরাটা দিয়েছেন অধিনায়ক মিরাজ।

কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় বিফলেই গেলো মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। টিম পারফরম্যান্সের প্রদর্শনী দেখিয়ে বিপিএলের অষ্টম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচটি জিতে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশাল।

আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল চট্টগ্রাম। জবাবে ৬ উইকেট হারালেও ১৮.৪ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে বরিশাল। বল হাতে মাত্র ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। কিন্তু থাকতে হলো পরাজিত দলে।

১২৬ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না বরিশালের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বাঁ-হাতি ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে সরাসরি বোল্ড করে দেন মিরাজ। নাসুম আহমেদ ও মেহেদি মিরাজের ভেলকিতে প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান তুলতে পারে বরিশাল।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় তারা। বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের করা সেই ওভারে একটি করে চার হাঁকান সৈকত আলি ও সাকিব আল হাসান। তবে পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারেই বরিশাল অধিনায়ককে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক।

বল হাতে দুর্দান্ত ৪ ওভার করা সাকিব ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি। এরপর তৃতীয় উইকেটে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৪ রানের জুটি গড়েন সৈকত। বেশ কিছু দারুণ শট খেলে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তরুণ তৌহিদ।

কিন্তু মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর করা ১২তম ওভারের প্রথম বলে অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৬ রান করা তৌহিদ। তবু একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের কক্ষেই রাখেন আরেক ওপেনার সৈকত আলি।

তবে চট্টগ্রামকে ম্যাচে ফেরার আভাস দেন অধিনায়ক মিরাজ। ইনিংসের ১৫তম ওভারে নিজের স্পেল শেষ করতে এসে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সৈকত। পরের বলেই তাকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন মিরাজ। ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে ৩৯ রান করা সৈকতের বিদায় নিশ্চিত করেন উইল জ্যাকস।

সেই ওভারে আরও দুই উইকেট হারায় বরিশাল। সৈকত আউট হওয়ার পরের বলেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ১৬ রান করা ইরফান শুক্কুর। আর শেষ বলে রানআউটে কাঁটা পড়েন সালমান হোসেন। নিজের চার ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন মিরাজ। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে কখনও ৩ উইকেট পাননি তিনি।

মিরাজের এই ওভারের পরও অবশ্য কোনো ফায়দা হয়নি চট্টগ্রামের। বলা ভালো, ফায়দা হতে দেননি জিয়াউর রহমান। আট নম্বরে নেমে মুকিদুলের করা ১৭তম ওভারে দুই চার ও এক ছয়ের মারে ১৮ রান নিয়ে নেন জিয়া। যার সুবাদে ম্যাচ ঢুকে যায় বরিশালের পকেটে।

এরপর শরিফুলের করা ১৮তম ওভারে ৯ এবং বেনি হাওয়েলের ১৯তম ওভারে চার বল থেকে বাকি কাজ সারেন জিয়া ও ডোয়াইন ব্রাভো। শেষ পর্যন্ত জিয়া ১২ বলে ১৯ এবং ব্রাভো ১০ বলে ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন।

এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব। প্রতিপক্ষের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে নাইম হাসানের করা প্রথম বলেই লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান কেনার লুইস।

তবে প্রতিশোধ নিতে সময় লাগেনি নাইমের। এক বল পরই আবারও কেনারকে ছক্কা হাঁকাতে প্রলুব্ধ করেন নাইম। তবে এবার সীমানা পার করতে পারেননি ক্যারিবীয় ওপেনার, ধরা পড়ে যান লং অন বাউন্ডারিতে। সেই যে শুরু, এরপর আর রানের গতি বাড়েনি চট্টগ্রামের।

তিন নম্বরে নেমে হতাশ করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। আলঝারি জোসেফের লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ডান দিকে লাফিয়ে দারুণ ক্যাচে ৬ রান করা আফিফের বিদায়ঘণ্টা বাজান ইরফান শুক্কুর।

একই অবস্থা হয় সাব্বির রহমানের। আলঝারির ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকালেও, সাকিব আল হাসানের করা পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ভুল লাইনে খেলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ৮ রান করা সাব্বির। তাকে আউট করার মাধ্যমে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের উইকেট বেড়ে হয় ৩৯৯।

পাওয়ার প্লে'র মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে যখন কঠিন বিপদে চট্টগ্রাম, তখন চাপ আরও বাড়িয়ে দলীয় ৪২ রানে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস। তার ব্যাট থেকে আসে এক ছয়ের মারে ২০ বলে ১৬ রান। জ্যাকসের উইকেট নেন বাঁহাতি চায়নাম্যান জ্যাক লিন্টট।

দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ দীর্ঘসময় উইকেটে থেকে হুট করেই ছক্কা মারতে গিয়ে নাইম হাসানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। মিরাজ করেন ২০ বলে ৯ রান। আরেক তরুণ শামীম পাটোয়ারী ২৩ বল খেলে করতে পেরেছেন মাত্র ১৪ রান। অভিজ্ঞ নাইম ইসলাম ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি।

এরপরই মূল ঝড়টা তোলেন বেনি হাওয়েল। ইনিংসের ১৪ ওভারে ৬৩ থেকে শেষের ৬ ওভারে আরও ৬২ রান করে চট্টগ্রাম। যেখানে মূল অবদান বেনিরই। তিনি শেষ ওভারে আউট হওয়ার তিনটি করে চার-ছয়ের মারে মাত্র ২০ বলে করেন ৪১ রান। এর মধ্যে আলঝারির ১৯তম ওভারে নেন ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৬ রান।

ডোয়াইন ব্রাভোর করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হন বেনি। ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের সংগ্রহটা ১২৫ রানে নিয়ে যান মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে এ সংগ্রহ পেয়েছে চট্টগ্রাম।

বরিশালের পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন আলঝারি জোসেফ, নাইম হাসানের শিকার দুই উইকেট। এছাড়া সাকিব, ব্রাভো ও লিনটটের ঝুলিতে গেছে একটি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

টস: বরিশাল, বোলিং

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১২৫/৮, ২০ ওভার (বেনি হাওয়েল ৪১, উইল জ্যাক স ১৬, নাঈম ইসলাম ১৫, শামীম পাটোয়ারী ১৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ৯; অ্যালজারি জোসেন ৩/৩২, নাঈম হাসান ২/২৫, সাকিব আল হাসান ১/৯, জ্যাক লিনটট ১/১৮ এবং ডোয়াইন ব্র্যাভো ১/৩৯)।

ফরচুন বরিশাল: ১২৬/৬, ১৮.৪ ওভার (সৈকত আলী ৩৯, জিয়াউর রহমান ১৯*, ইরফান শুকুর ১৬, তৌহিত হৃদয় ১৬, সাকিব আল হাসান ১৩, ডোয়াইন ব্র্যাভো ১২*; মেহেদী হাসান মিরাজ ৪/১৬, মুকিদুল ইসলাম ১/২৫)।

ফল: ফরচুন বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী (৮ বল হাতে রেখে)।
ম্যাচ সেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২২)