আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংশভাবে গৃহবধু রাশিদা বেগমকে হত্যার আট ঘন্টার মধ্যে ঘাতক স্বামী, স্বামীর চুক্তি করা দুই হত্যাকারী বন্ধুসহ মোট তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃত তিন জনই পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, দেশীয় অস্ত্র, চারটি মোবাইল ফোন, রক্তমাখা জামাকাপড়, জুতাসহ একটি মাহেন্দ্র। আট ঘন্টার মধ্যে অজ্ঞাত হত্যাকারীদের গ্রেফতার, স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি আদায়, আলামত উদ্ধার করে নজির সৃষ্টি করছে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ। 

গ্রেফতারকৃত তিন জনকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য শুক্রবার সকালে বরিশাল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে নিহত রাশিদার লাশ পোস্ট মর্টেম শেষে বৃহস্পতিবার বাদ এশা নিজ গ্রাম নগরবাড়ি জামে মসজিদে জানাজা শেষে বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। রাশিদার দশ মাসের শিশুপুত্র তানিমসহ রাশিদার তিন ছেলে বর্তমানে তার মামা বাড়িতে রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-নিহত রাশিদার স্বামী গোপালগঞ্জ সদর থানার বেতগ্রামের আনোয়ার শেখ এর ছেলে তামিম শেখ (৪২), তামিমের বন্ধু টাকার বিনিময়ে চুক্তি করা হত্যাকারী কোটালীপাড়া থানার তারাশি গ্রামের ইদ্রিস দাড়িয়ার ছেলে রুবেল দাড়িয়া (৩৫) ও বেতগ্রামের মৃত সালাম শেখের ছেলে মাহেন্দ্র চালক জুলহাস শেখ (৪২)।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, গৃহবধু রাশিদাকে তার স্বামী তামিম শেখ বুধবার ফোনে গোপালগঞ্জ যেতে বললে রাশিদা তার শিশু পুত্রকে নিয়ে গোপালগঞ্জ যায়। গোপালগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল ‘রোহান’ এর ২০৭ নম্বর কক্ষে তারা অবস্থান করে। রাতের খাবার খেয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে হোটেল থেকে নেমে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি স্বামী তামিমের বিস্বস্ত বন্ধু ও চুক্তি করা হত্যাকারী রুবেল ও মাহেন্দ্র চালক জুলহাস এর মাহেন্দ্রতে করে সদর থানার ঠুটামান্দ্রা বিলের মধ্যে নিয়ে যায় রাশিদাকে। জনশুন্য ওই বিলে রাশিদাকে মাহেন্দ্র থেকে নামিয়ে রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে রুবেল দাড়িয়া ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে রাশিদাকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে ঘাতকেরা।

এর আগে ঘাতক স্বামী তামিম স্ত্রী রাশিদাকে হত্যার জন্য রুবেল ও জুলহাসের সাথে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তবে রাশিদার স্বামী তামিম চুক্তি করা রুবেল ও জুলহাসকে কোন টাকা পরিশোধ করেনি বলে পুলিশকে জানিয়ে তারা।

রাশিদাকে হত্যার পরে বুধবার রাতেই বরিশাল-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস এলাকায় একটি ঘেরের পাড়ে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতকেরা।

স্থানীযদের মাধ্যমে খবর পেয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাজহারুল ইসলাম বুধবার রাতেই রাশিদার বেগম (৩৫) এর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। নিহত রাশিদা আগৈলঝাড়া উপজেলার নগড়বাড়ি গ্রামের মৃত করিম শাহ’র মেয়ে। রাশিদার লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি তার দশ মাস বয়সী শিশু পুত্র তনিমকে মায়ের লাশের ৫শ গজ দূরে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাজহারুল ইমলাম জানান, দাম্পত্য কলহের জের ধরে রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করে হত্যাকারীরা। নিহত রাশিদার এটা দ্বিতীয় বিয়ে এবং ঘাতক স্বামী তামিমেরও দ্বিতীয় বিয়ে। তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তামিমের ও রাশিদার আগের ঘরে দুটি করে ছেলে সন্তান ছাড়াও রাশিদার কোলে তামিমের ১০ মাস বয়সী ঐরসজাত তানিম নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। রাশিদা তার স্বামীর প্রথম স্ত্রীর কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার ১নং ব্রীজ সংলগ্ন এলকায় শিশু পুত্রসহ তিন পুত্রকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

লাশ উদ্ধারের পরে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে ঘাতক স্বামী তামিমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে ঘাতক তামিমের অপর দুই সহযোগী রুবেল দাড়িয়া ও জুলহাস শেখকে গোপালগঞ্জ ও বেদগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় হত্যায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও আলামত উদ্ধার করে পুলিশ। রাশিদা হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই আল আমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে আগৈলঝাড়া থানায় বৃহস্পতিবার হত্যা মামলা দায়ের করে, নং-৮(২০.১.২২)। হত্যার আট ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার, স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি আদায়, আলামত উদ্ধার করে নজির সৃষ্টি করছে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২২)