স্টাফ ‍রিপোর্টার : মাটির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগ জরুরি। এ ব্যাপারে উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সমন্বিত কর্মসূচি নেওয়া এবং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (বিএমইএল) আয়োজিত ‘১৪তম বার্লিন কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে’ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী।

বিএমইএলের আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী (২৪-২৮ জানুয়ারি) ১৪তম ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারের (জিএফএফএ)’ শেষদিন শুক্রবার কৃষিমন্ত্রীদের এ সম্মেলন হয়। করোনার পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চুয়ালি কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ভূমির টেকসই ব্যবহার: মৃত্তিকা থেকেই খাদ্য নিরাপত্তার শুরু’ এ শিরোনামে কৃষি খাদ্যবিষয়ক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ সম্মেলনে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশের কৃষিমন্ত্রী ও ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বাংলাদেশে মাটির টেকসই ব্যবহারের নানা চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও টেকসই ব্যবহার অনেক চ্যালেঞ্জিং। ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে মাটির অতিরিক্ত ব্যবহার, মাটির অবক্ষয়, দূষণ, লবণাক্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির পুষ্টি উপাদানের অবক্ষয়, মাটি ক্ষয় প্রভৃতি সমস্যা রয়েছে। এছাড়া, নগরায়ন, শিল্পায়নসহ নানা কারণে বছরে কৃষি জমি কমছে শূন্য দশমিকর ৪৩ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ সরকার মাটির টেকসই ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে মাটির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত ও বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করতে উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সমন্বিত ও জোরাল কর্মসূচি নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের পাশে দাঁড়াতে হবে, সহযোগিতা বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার অব ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অজদেমির, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক ইইউ কমিশনার জানুস্ত উজসিচোস্কি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক জ্যাঁ মেরি পগাম ও বিভিন্ন দেশের কৃষিমন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন

সম্মেলনের জানানো হয়, বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের ৭০ শতাংশ মাটির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের মাটিই আজ হুমকির সম্মুখীন। নগরায়ন, শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস, দূষণ, লবণাক্ততা, মরুকরণ নানা কারণে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে বেশি জমি প্রয়োজন— কারণ খাদ্য চাহিদা বাড়ছেই।

এ বিষয়কে সামনে রেখে গত পাঁচদিনে বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা একটি ‘যৌথ ইশতেহার’ (কমিউনিক) প্রস্তুত করেছেন। মাটির টেকসই ব্যবহার ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথ ইশতেহারে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ২৯টি বিষয়ে (কল ফর অ্যাকশন) একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

সম্মেলনে যে চারটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আলোচনা ও করণীয় নির্ধারিত হয়। প্রথমত, মাটির অবক্ষয়রোধ করণীয়। মৃত্তিকার গুণাগুণ ও বাস্তুতন্ত্রকে কীভাবে রক্ষা করা যায়। কারণ, এক-তৃতীয়াংশ প্রজাতি মাটির নিচে বসবাস করে।

দ্বিতীয়ত, অবক্ষয় সাধিত মাটির উন্নয়ন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, এরই মধ্যে বিশ্বের ৩৩ শতাংশ মাটি অবক্ষয় সাধিত/ডিগ্রেডেড (অধঃপতন) হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। কারণ, ১০ সেন্টিমিটার মাটির উন্নয়ন করতে প্রায় দুই হাজার বছর লাগে। এছাড়া মাটির অবক্ষয়ের কারণে আগামী ২৫ বছরে খাদ্যের দাম ৩০ শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, সীমিত জমির টেকসই ব্যবহার ও কৃষি জমিকে কীভাবে রক্ষা করা যায়।

চতুর্থত, কৃষকেরা কীভাবে জমির মালিকানা পেতে পারে। প্রকৃত কৃষকের কাছে জমির মালিকানা থাকলেই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব হবে। অথচ, ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়ন মানুষ তাদের নিজস্ব জমি/ভূ-সম্পত্তি থেকে মালিকানা হারাবে বা উৎখাত হবে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২৯, ২০২২)