গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ষাটোর্ধ একজন দরিদ্র, অসহায় রিক্সাচালকের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য ফেসবুকে ছোট্ট একটি পোস্ট দিয়েছিলেন সাংবাদিক সোহাগ। এরপরই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে হৃদয়বান অসংখ্য মানুষ সাড়া দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অর্থ পাঠান সাংবাদিক সোহাগকে। সেই প্রাপ্ত অর্থে ৬০ হাজার টাকায় একটি নতুন রিক্সা কিনে দরিদ্র ওই রিক্সাচালককে সেটি উপহার দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাংবাদিক সোহাগ।

জানা গেছে, সোহাগের পুরো নাম মাহাবুর আলম সোহাগ। তিনি বর্তমানে নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের 'কান্ট্রি এডিটর' হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সোহাগ গত ৯ জানুয়ারি একটি পারিবারিক কাজে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে আসেন। সেসময় বাস থেকে নেমে তিনি তাঁর গন্তব্যে যেতে স্থানীয় একটি ভাঙ্গাচোরা রিকশায় ওঠেন।

কিন্তু কয়েক মিনিট পরই সোহাগ লক্ষ্য করলেন, যিনি লক্করঝক্কর মার্কা ভাঙ্গা রিক্সাটি চালাচ্ছেন সেই ষাটোর্ধ রিকশা চালকের পায়ে জুতা নেই। প্রচন্ড শীতে উনাকে খালি পায়ে রিক্সার প্যাডেল চালাতে দেখে তার মন কেঁদে ওঠে। তখন রিক্সায় বসেই বৃদ্ধের নাম পরিচয় ও তার পরিবারের লোকজনের খবরাখবর জানতে চান সেহাগ।

পরে জানা গেল, রিকশা চালকের নাম আবু কালাম। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের উত্তর সুহিলপুর গ্রামে।

জানা গেছে, এরপর ওই রাতেই ঢাকা ফেরার পথে সাংবাদিক সোহাগ দরিদ্র রিক্সা চালকের দু:খকষ্ট নিয়ে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে সমাজের হৃদয়বানদের সহযোগিতা চান।

এরপর স্বল্প সময়ের মধ্য পাঠকের পাঠানো ৬০ হাজার টাকায় একটি নতুন ব্যাটারীচালিত রিক্সা কিনে সোহাগ গত শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওই রিকশা চালকের বাড়িতে।
পরে সুহিলপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আবু কালামের কাছে তার জন্য কেনা নতুন ওই ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা পোস্টের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয়, জাগো নিউজের সাংবাদিক আবুল হাসনাত মো. রাফি, বাংলা নিউজের সাংবাদিক মেহেদী নূর পরশসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নতুন রিকশা পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বৃদ্ধ রিক্সাচালক আবু কালাম সাংবাদিকদের তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'আমার রিক্সাটি এতদিন ভাঙাচোরা ও লক্করঝক্কর মার্কা হওয়ায়, যাত্রীরা উঠতে চাইত না। তবে এখন আমার নতুন রিকশায় সকলেই উঠবো, আমার আয়ও বাড়বো। সেজন্য আমি সাংবাদিক সোহাগ ভাইয়ের জন্য মহান আল্লার কাছে দোয়া করছি।'

এদিকে গতকাল শনিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথার একটি ভার্চ্যুয়াল টকশোতে অংশ নিয়ে সুহিলপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ ভূঁইয়া দরিদ্র রিক্সাচালক আবু কালামকে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তায় একটি নতুন ঘর তুলে দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন।

(জিডিএ/এএস/জানুয়ারি ৩০, ২০২২)