তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : মাতৃভুমিতে ফিরতে চান সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হবিগঞ্জের সাহেনা খাতুন (৪০)। উন্নত জিবন ও ভাল বেতনের প্রলোভনে সৌদি আরবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে নারী সাহেনা খাতুনকে। পৈশাচিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে এক ভিডিও বার্তায় দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এদিকে, অসহায় মা’কে দেশে ফিরিয়ে আনতে দালালের দ্বারস্থ হলে ভুক্তভোগীর সন্তান ও পরিবারকে উল্টো মামলা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের হুমকিও দিচ্ছে পাচারকারীরা।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে দেয়া ভিডিও বার্তায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, ‘কমপক্ষে ২ বার আমাকে বেচাকেনা ও হাত বদল করা হয়েছে। ঢাকা থেকে রিয়াদে পৌঁছানোর পর গভীর রাতে পথ বদল, মানুষ বদল, গাড়ি বদল করে ১৫ দিনে আমাকে মরুভূমির মতো একটি এলাকায় নিয়ে তালা মেরে রাখা হয়। ১০ কক্ষের ওই বিশাল বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন আমাকে তেমন কাজ করতে হয়নি। সকাল হলেই একজন আরব নারী ঘর তালাবদ্ধ রেখে বাইরে চলে যেতেন। সপ্তাহ না ঘুরতেই শুরু হয় আমার ওপর নেমে আসে নির্যাতন, তখন বুঝতে পারি আমাকে নির্যাতনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।'

তিনি আরো বলেন, ‘ওরা আমাকে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে, নির্যাতন করছে, আমি দেশে ফিরতে চাই, আমার সন্তানের কাছে। গৃহকর্মীর কাজ দেবার কথা বলে গত ৭ মাস আগে ঢাকার একটি এজেন্সির মাধ্যমে সাহেনা খাতুনকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে পাঠায় দালালরা। সাহেনা খাতুন হবিগঞ্জ পৌর এলাকার যশোরআব্দা এলাকার মৃত খেলু মিয়ার কন্যা। সংসার জিবনের প্রথম দিকেই অভাব অনটনের জন্য স্বামীর সংসার ছাড়তে হয় তার। বহুকষ্টে একমাত্র কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করে কোন সংসারী করার চেষ্টা করেন। পরে নিজে একটু উন্নত জিবনের আশায় একটি কাজের সন্ধানে ঘুরতে থাকেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। অসহায় সাহেনা খাতুনের এই দূর্বলতার সুযোগটাই কাজে লাগায় প্রতিবেশী মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র আদম ব্যবসায়ী শিশু মিয়া (৪০) ও সাহেনা খাতুনের সৎ ভাই সফিক মিয়া (৩৮)। ছলে-বলে নানা কৌশলে বেশী বেতনের প্রলোভন দেখায় তারা। মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিলেই সৌদি আরবে মিলবে গৃহকর্মীর কাজ। বেতন হিসেবে প্রতি মাসে পাওয়া যাবে লক্ষাধিক টাকা। সৎ ভাই ও বিশ্বস্থ প্রতিবেশীর কথায় রাজি হয়ে যান সাহেনা খাতুন। কথামত ধার-দেনা করে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেন সৎ ভাই ও দালাল শিশু মিয়ার হাতে। পাসপোর্ট, ভিসা সব রেডি করেন শিশু মিয়া। সময়মত প্রবাসের উদ্দেশ্যে রওনা হন সাহেনা খাতুন। তবে সৌদি আরবে যাওয়ার পরই পাল্টে যায় ঘটনার চিত্র। ভোররাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাটতে হয় তাকে। কাজে একটু কম-বেশী হলেই অমানুষিক নির্যাতন করা হয় তাকে। ঠিকমত দেয়া হয় খাবার ও ঔষধ। সপ্তাহে একবারও দেখা পান ভাতের। কারো কাছে নির্যাতনের বিচার দিলে উল্টো আরও নির্যাতন করা হয়। অসুস্থ্য হয়ে বিচানায় কাতরালেও কেউ কোন খবর নেয় না। এগুলো দালাল শিশু মিয়াকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে সৌদি অফিসের মাধ্যমে সাহেনাকে ডেকে নিয়ে মারপিট করে।

নির্যাতিতা সাহেনা খাতুনের মেয়ে স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘শিশু দালালের মাধ্যমে আম্মাকে বিদেশ পাঠানো হয়। সেখানে আম্মাকে নির্যাতনের কথা আমাদের জানালে আমরা শিশু মিয়ার কাছে যাই। কিন্তু তিনি আম্মাকে দেশে আনতে ৪ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। এত টাকা পরিশোধ করা আমাদের সাধ্যের বাহিরে।

অভিযুক্ত শিশু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘সাহেনা খাতুন নিজের সম্মতিক্রমেই সৌদি গিয়েছেন। তাকে আমি পাঠিয়েছি সত্যিই, তবে তার কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেইনি, সে সেখানে নিয়মিত বেতন ও টাকা পয়সা ভোগ করছে’।

(টিএইচ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২)