নূরুল আমিন খোকন, ফেনী : ফেনীর সোনগাজী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার শহীদ নুরুল আফছার হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে উক্ত মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ফেনীর অতিরিক্ত দায়রা জর্জ শাহ মোঃ কায়সার। এসময় আদালতে তিন আসামি উপস্থিত ছিলেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, বহুল আলোচিত ও ঐতিহাসিক এই মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। বাদী আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁর বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার শহীদ নুরুল আফছারকে হত্যার বিষয়ে আসামিদের উপস্থিতিতে মর্মান্তিক সেই হত্যা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। পরবর্তী তারিখেও বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে ১১জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগহণ করা হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা য়ায়, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় সোনাগাজী থানার ভেতরে চিহ্নিত রাজাকার শাহজাহান আকবরের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন এফএফ কমাণ্ডার নুরুল আফছার। তখন রাজাকার শাহজাহানকে বাঁচাতে তার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন আফছারকে হত্যার নির্দেশ দেন। ওই সময় দক্ষিণ চর ছান্দিয়ার মুক্তিযোদ্ধা আর্মি মনির আহমদ ও তুলাতুলি গ্রামের মাহবুবুল হক জোরপূর্বক নুরুল আফছারের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। এর পর সুজাপুর গ্রামের আবুল কাশেম কাজি ৮ রাউন্ড গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই এফএফ ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার নুরুল আফছার নিহত হন।

এর আগে আমলী আদালতে বিভিন্ন সময়ে ১৬৪ ধারায় ঘটনার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন, যুদ্ধকালীন কমাণ্ডার আজিজুল হক চাষী, মফিজুল হক পাটোয়ারী, কেএম খুরশিদ আলম, ডেপুটি কমাণ্ডার দুলাল আহমেদ, আবু তাহের তানু, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ ছাদেক, আবদুল হালিম ও মোঃ হোসেন আহম্মদ।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মরণ পণ লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ শক্রমুক্ত বা স্বাধীন হয় ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু ফেনী জেলার উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজী মুক্ত হয ৫ ডিসেম্বর। বিজয়ের এই মুহূর্তে সোনাগাজীর চিহ্নিত রাজাকার শাহজাহান আকবর সহ কতিপয় রাজাকারদের রক্তা করতে গুটিকয়েক বিপদগামী মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে সোনাগাজী থানার ভেতরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় এফএফ ফোর্সের কমাণ্ডার নুরুল আফছারকে। ওই সময়ে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সোনাগাজীর চিহ্নিত রাজাকার শাহজাহান আকবরের কুকর্ম আর নিরীহ মানুষ হত্যার বিবরণ দিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সবশেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোনাগাজী থেকে প্রকাশিত হয় "শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার নুরুল আফছার স্মরনিকা"।

সেখানে তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের স্মৃতিচারণ মূলক লেখায় লিখে গেছেন আফছার হত্যার হৃদয়বিদারক সেই কাহিনী। তাঁরা লিখেছেন, কুখ্যাত এই রাজাকার শাহজাহানকে রক্ষা করতে কীভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের এফএফ ফোর্সের একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডারকে হত্যা করা হয়, তার বিবরণ।

পরবর্তীতে বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর নজরে পড়লে তাঁরই পরামর্শে ১৩ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে ৪ আসামির নাম উল্লেখ করে ফেনী আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন শহীদ নুরুল আফছার এর ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া। উক্ত মামলায় নাছির উদ্দিন (৭৮), মোশারফ হোসেন (৭৭) ও আবুল কাশেম কাজি (৭৩) জামিনে আছেন এবং অপর আসামী রাজাকার শাহজাহান আকবর (৭২) পলাতক রয়েছেন।

(এনকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২)