বালিয়াডাঙ্গী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি ইনচার্জ দিলসানারা আফরোজ বেবির বিরুদ্ধে হাসপাতালে বিভিন্ন টেষ্টের জন্য রোগীদের কাছ থেকে রশিদ না দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগীরা । সেই সাথে সরকারি নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন টেষ্টের জন্য রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্বসাৎ করার অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
সরজমিনে গিয়ে কথা বললে ভুক্তভোগী রোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে লিজা আকতার নামে এক গর্ভবর্তী মহিলা বলেন, আমি রক্ত এবং প্রসাব টেষ্ট করতে আসলে আমার কাছে প্যাথলজি ইনচার্জ ও তার ছেলে ১৮০ টাকা চায় যদিও এটা আমাদের মত গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য হাসপাতালে ফ্রী তবুও তিনি টাকা নিচ্ছেন টাকার রশিদ চাইলে তিনি বলেন আমাদের অফিসে রশিদ নেই।
একই অভিযোগ করেন আরেক গর্ভবর্তী মহিলা তনজুরা বেগম তিনি বলেন,আমি একজন গর্ভবর্তী মহিলা আমি রক্ত ও প্রসাব টেষ্ট করতে এসেছি তিনি আমার কাছে ১৬০ টাকা চান আমি বলি সরকারি হাসপাতালে টাকা দিতে হবে কেন তখন হাসপাতালের ম্যাডাম আমাকে ধমক দিয়ে বলেন এসব মেশিন ও ঔষুধ যে দেখতে পাচ্ছ এগুলো কিনতে টাকা লাগেনা এর টাকা আসে কোথা থেকে। শাহিদ নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র অভিযোগ করে বলেন আমি আমার বন্ধুর রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা করতে এসেছি আমার কাছে উনি ৬০ টাকা চায় আমি উনাকে ৫০ টাকা দিতে চাই এবং টাকার রশিদ চাইলে তিনি বলেন তাহলে ১০০ টাকা লাগবে এটা কি ভাই সরকারি হাসপাতাল না লুটপাটের জায়গা।
মর্জিনা নামে এক মেয়ে বলেন, আমি আমার গর্ভবর্তী চাচীকে নিয়ে এসেছি টেস্ট করার জন্য উনি আমার কাছে ২০০ টাকা চায় আমি বলি এত টাকা কেন তখন ওই রুম থেকে এসে একজন ছেলে আমাকে ধমক দিয়ে বলে সেই জবাব কি আপনাকে দিতে হবে আপনি কে। পরে অবশ্য শুনলাম ছেলেটা হাসপাতালের ঐ আপার ছেলে। আমরা গরীব মানুষ ভাই এত টাকা দিতে পারলে আমরা বাইরে টেস্ট করাতাম হাসপাতালে আসতাম না এখানে এসে দেখি আরও বেশি লুটপাট শুরু হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক ভুক্তভোগী রোগীর অভিযোগ করে বলেন রক্ত,প্রসাব সহ অন্যান্য পরিক্ষা গুলো হাসপাতালে করতে আসলে অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করে টাকার রশিদ চাইলে তিনি বলেন আমাদের অফিসে দু তিন মাস ধরে রশিদ নেই ।
রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া রশিদ ছাড়া টাকা কোথায় যায় জানতে চাইলে তিনি আমাদের একটা সাদা কাগজে লেখা কিছু নাম দেখান। রশিদ দেখাতে না পারাই আমরা রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে প্রথমে তিনি খাতা দেখাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন এবং আগামী কালকে আরএমও কে খাতা দেখাবেন বলে জানান। পরে অবশ্য হাসপাতালের আরএমও নির্দেশে রেজিস্ট্রার খাতা দেখাতে বাধ্য হলে কেঁচো খুরতে সাপ বেড়িয়ে আসে খাতায় দেখা যায় পুরো হিসাবের গরমিল এবং ২০২২ সালের কোন দিন কতজন রোগীর টেস্ট করা হয়েছে বা কত টাকা রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে তার কোন হদিস নেই এবং কি খাতায় তারিখও উল্লেখ নেই।
হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক বার এসব অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কিন্তু তিনি কারো কথার তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন এসব অনিয়ম করেই যাচ্ছেন। এসব অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ এ এস এম আলমাস বলেন, কিছু দিন হল সরকারি ভাইচার শেষ হয়ে গেছে, ইতিমধ্যে ভাউচার আনার ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভাউচার না থাকায় সরবরাহ করা রেজিস্ট্রিার খাতায় রোগীর নাম, বয়স,তারিখ, সেবামূল্যসহ পরীক্ষার নাম লিখে সেবামূল্য গ্রহণ করার মৌখিক আদেশ দেওয়া হয়েছিল, এখন তা কতটুকু যথাযথভাবে করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এজন্য উনাকে তলব করা হয়েছে তিনি আমার কাছে সাত দিনের সময় চেয়েছেন।
গর্ভবর্তী মহিলাদের টেস্টের জন্য টাকার নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন গর্ভবর্তী মহিলার ডিএসএফ কার্ড থাকলে টেস্টের জন্য হাসপাতালে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। টাকা নিলে তাকে অবশ্য হাসপাতালের রশিদ দিতে হবে না দিলে তিনি অপরাধ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে অভিযোগের সত্যতার প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এফআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২)