এ কে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর জেলা বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকলেও ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে একাধিক ভবন। যেখানে ভবন নির্মাণের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে লক্ষ ছেড়ে কোটি টাকা। বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের থেকে বিভিন্ন ভাবে বরাদ্দ এনে প্রয়োজন ছাড়াই করা হয়েছে ভবনের সৌন্দর্যের কাজ। অথচ প্রতিষ্ঠান প্রধান চাইলে ওই সব বরাদ্দ থেকে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারেন।

সূত্র মতে, জেলায় ৭৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে ৬৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহীত মিনার নেই। যা কিনা শতকরা ৮৬ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার।

তবে ভাষার মাসে স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনেরর জন্য জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০ বছরে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা গেল না?

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিনেও এসব স্থাপনা নির্মাণ করা যায়নি।

সূত্র জানায়, রাজবাড়ীতে ৯০ শতাংশ প্রাথমিক, ৭০ শতাংশ মাধ্যমিক ও ৬৫ শতাংশ মাদ্রাসায় নেই শহীদ মিনার। জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৮২টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৪২টি বিদ্যালয়ে, অর্থাৎ শহীদ মিনার আছে প্রায় ১০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নেই প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমি জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে একটি নির্দেশনা এসেছে সব বিদ্যালয়ে একই আকার ও আয়তনের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। যারা নিজস্ব উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করবে, তাদের জন্যই এই নির্দেশনা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, শহীদ মিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্তার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন জনপ্রতিনিধি বলেন , ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্তের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয়, সেই জাতির দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

(একে/এএস/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২)