মো. সিরাজ আল মাসুদ

সেদিন ৭ মার্চ
একটি কবিতা লেখা শুরু হবে বলে
সেদিন বিকেলে দিগন্ত জোড়া আকাশটা
শুভ্র হয়ে উঠেছিলো
আকাশটা অপেক্ষ ছিলো কবির কবিতার আঁচড়ের
এ যেনতেন কবিতা নয়!
নিজের আঙ্গুল কেটে -
তর্জনী উঁচিয়ে আকাশটাকে কবিতার ডায়েরি বানিয়ে -
তবেই তো লিখবেন কবি
অপেক্ষমান কোটি জোড়া চোখ
আজই কবি শুরু করবেন তাঁর কবিতা লিখা
অবশেষে তিনি আসলেন
তর্জনী উঁচিয়ে দুধ সাদা আকাশে কবিতার প্রথম শব্দ লিখলেন 'স্বাধীনতা '
সেই থেকে 'স্বাধীনতা ' শব্দটির সাথে পরিচয় হলো ৭ কোটি নিরন্ন মানুষের -
পায়ের তলে পিষে যাওয়া -
নেতিয়ে যাওয়া -
দূর্বার ডগাটা হঠাৎ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেলো,
পাড়ার যে ছেলে টা হাটতে পারছিলো না পোলিও নামের অসুখে
সে ছেলেটা চোখের সামনে ভোঁদৌড়
যে বৃদ্ধা মা
অসুখের যন্ত্রণায় মরতে চায় রোজ
সেও আজ আরো বেশিদিন বাঁচতে চায়
কি প্রেম!
কি সাহস!
কি যাদু!
কবিতার একটি মাত্র শব্দে
কবি কি স্বপ্ন আঁকলেন শুভ্র ঐ আকাশে
দীর্ঘ নয়টি মাস
নাওয়া নেই
খাওয়া নেই
ঘুম নেই
ভালবাসার মানুষের স্পর্শও নেই
এতসব বাদেও বাংলার মানুষ
'স্বাধীনতা' পরবর্তী শব্দটির জন্য
পরের একটি চরণের জন্য -
নিরন্ন, বুভুক্ষু মানুষগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা
দিনের পর দিন
মাসের পর মাস
অপেক্ষা করতে করতে
একদিন কবিতা খানার নাম পেল 'বাংলাদেশ'
এর মধ্যে ছিন্ন হয়েছে মাঝির পাল
বাসন্তীর শ্বশুর মারা গেছে
গোয়ালের মহারাজকে জবেহ না করে
হত্যা করেছে
সাদিকের কুমারী মেয়েটা হয়েছে গর্ভবতী
ঘর পুড়েছে বিধবা জরিনা খালার
বারুদের গন্ধে বাংলার বাতাস হয়েছে দূষিত
বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়েছে দীপকের নিন্মাঙ্গ
মুসলিম নাকি হিন্দু
প্রমাণে প্রাণ হারিয়েছেআ. রহমানের খৎনা না করা ১৬ বছরের গোঁয়ার ছেলেটা
তবু কবির মুখের দিকে তাকিয়ে
আকাশ ভরা শব্দমালা দেখে
প্রতিটা শব্দের ব্যতিক্রমী আহ্বানে দীর্ঘ নয়টি মাস কেটেছে
ক্লান্ত কবি
শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে
লিখে চলছেন...
লিখেই যাচ্ছেন
এক মনে
রাখালের বাঁশিতে
দক্ষিণা হাওয়ায়
সবুজ ঘাসের বুকে জমাট লাল রক্ত দেখে
অনেকগুলো গর্ভবতী মায়ের আর্তচিৎকারে
পাল তোলা নৌকার মাঝির ভাটিয়ালি গানে
হটাৎ কবির সম্বিত ফিরে
তিনি কলম থামিয়ে
পেছন ফিরে তাকালেন
মিষ্টি হেসে বললেন -
'আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি'।