চৌধুরী আবদুল হান্নান


বাঙালি নারীদের প্রতি দখলদার পাক সেনাদের মর্মন্তুদ নির্যাতনের ফলে যুদ্ধ শেষে বহু শিশুর জন্মহয়েছিল, এ সকল যুদ্ধ-শিশুর পিতা নেই, মা বীরঙ্গনা।

দেশ স্বাধীন হলো বটে কিন্ত তাদের জীবন আর মান সম্মান নিয়ে শুরু হলো নিরন্তর দুর্দশা , অবহেলাআর সামাজিক লান্চনা। হাত বাড়ালেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালে প্রায় প্রতিটি জন সভায় বীরঙ্গনাদের, যুদ্ধ-শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ”কেউ যদিতাদের পিতার নাম জিজ্ঞাসা করে, তবে বলে দিও—তাদের পিতা শেখ মুজিবর রহমান ।আর ঠিকানারপাশে লিখে দিও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর । তিনি আমাদেরই জাতির পিতা শেখ মুজিব ।

১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজিয়ার্সে চতুর্থ জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে সৌদি বাদশা ফয়সালবাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয় বলেছিলেন— ”সৌদি স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে“ ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ করতে হবে ।”

বঙ্গবন্ধু বলেন- ”এই শর্তটি কিন্ত বাংলাদেশের জন্য প্রজোয্য হতে পারে না । বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান দেশ হলেও এই দেশে প্রায় এক কোটির মতো অমুসলিম জন সংখ্যা রয়েছে । সবাই একইসঙ্গে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে হয় শরিক হয়েছে, না হয় দুর্ভোগ পোহায়েছে ।

বেয়াদবি মাফ করবেন, আপনাদের দেশটির নামও তো “ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি এরাবিয়া“নয় ।কই আমরা তো এই নামে কোনো আপত্তি করিনি ।”

এমন যুৎসই, নির্ভীক তাৎক্ষণিক জবাব কেবল বঙ্গবন্ধুই দিতে পারেন । তাছাড়া, এমন ভাবনার মধ্যেইতো নিহীত রয়েছে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্হান বা অসাম্পদায়িকতার মূলবাণী ।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের নির্দেশনায় রচিত হয়েছিল একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল ।অলিখিত , শৈল্পিক , কাব্যিক এই ভাষণটি সম্পর্কে ব্রিটেনের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী জ্যাক ওয়াডিস বলেছেন- “যদিও এইভাষণটিতে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার আহবান জানানো হয়েছে, আসলে এটা তাঁরসমকালীন বিশ্বে সব নিপীড়িত জাতিরই মুক্তি সংগ্রামের দিক নির্দেশনা ।”

একাত্তরের বাঁশিওয়ালা রাজনীতির কবি শেখ মুজিব বাজালেন এক যাদুকরি সুর এবং মাত্র ৫০ বছরবয়সেই একটি জাতি রাষ্ট্রের জন্ম দিলেন, আর বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত গণমানুষের মুক্তির পথদেখালেন ।

আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্য এই দেশে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার জন্ম হয়েছিল যিনি আমাদেরএই দেশটিকে উপহার দিয়েছেন । তাকে বিস্মৃতির আড়ালে ঠেলে দেওয়ার বহু চেষ্টা হয়েছিল , সেই সঠতাও চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে । ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর কপালে রক্ততিলক পরিয়াছে , বাঙালি জাতিয়তাবাদের মহাকাব্যের এই মহানায়ক প্রতি জন্মদিনে নতুন করে জন্ম নেন বাঙালির হৃদয়ে ।

মহাসমুদ্রের গভীরতাসম বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ থেকে অতি ক্ষুদ্রাংশ এখানে আলোচিত, তাঁরকর্মধারা আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎস । হৃদয়-উৎসারিত শ্রদ্ধান্জলি জাতির পিতার শুভ জন্মদিনে ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।