তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতার জন্য আত্মমর্যাদা ও স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে আগামী দিনে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব-এটাই আমাদের অঙ্গীকার। ২০৭১-এ স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করব। সেই সাথে ২১০০ সাল পর্যন্ত এই বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত হবে সেই পরিকল্পনা আমি প্রণয়ন করে দিয়েছি। শিশুদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই আমাদের সকল কর্মপরিকল্পনা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে পরিকল্পনা, তার কেন্দ্রে শিশুরা রয়েছে। শিশুর জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে যেতে চাই। তার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে দিয়েছি।

‘হৃদয়ে পিতৃভূমি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্মশত বার্ষিকীর সমাপনী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের পাবলিক প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতা থেকে আবৃত্তি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, উত্তর গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু প্রতিনিধি শেখ মুনিয়া ইসলাম।

বঙ্গবন্ধুর জীবণালেখ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাত। আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বিদেশে ছিলাম। তাই বেঁচে গিয়েছিলাম। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে রিফিউজির মতো দেশ-বিদেশে কাটাতে হয়েছে।’

‘এদেশের শিশুদের আগামী দিনে আমাদের মত স্বজন হারার বেদনা নিয়ে বাঁচতে না হয়। তারা যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়। শিশুদের জাতির পিতা অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই ২১ বছর পর যখন সরকার গঠন করি, তখন ১৭-ই মার্চকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দিই।’

বাংলার মানুষের জন্য দেশে ফেরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন বাংলাদেশে ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী, আল-বদর, রাজাকারদের রাজত্ব ছিল। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমি ফিরে এসেছিলাম।’

শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘তিনি শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পরপরই আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। শিশু অধিকার আইন সে সময় করে দিয়েছিলেন।’

শেখা হাসিনা তার সরকারের বিভিন্ন সময় শিশুদের অধিকার রক্ষায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় স্কুল বন্ধ ছিল। আল্লাহর রহমতে এখন সব স্কুল খুলে গেছে। কাজেই এখন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ আবার এসেছে। তারা পড়াশোনা করবে, সেটাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

‘শিখনমূলক নানা ধরনের গ্রাফিক্স ও কার্টুনগুলো আমরা করেছি। যখন করোনা ছিল, আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। শিশুরা যাতে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। যেখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশের শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। আমার ছেলে জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাবার কোলে চড়ে খেলা করতে। তিনি যখন বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতেন মনে হতো তিনি নিজেই যেন শিশু। এটাই ছিল তার চরিত্রে সব থেকে বড় দিক; তার সরলতা।

‘দুর্ভাগ্য ৭৫-এ শিশুরা মুক্তি পায়নি। কারবালার ময়দানেও এমন ঘটনা ঘটেনি। এই বাংলার মাটিতে যাদের জন্য আমার বাবা জীবন উৎসর্গ করেছেন, বছরের পর বছর কারাগারে ছিলেন, যাদেরকে একটি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেছেন, সেই বাঙালিদের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্ট সবচেয়ে দুঃখ।’

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা তুলে ধরেন তিনি। এবারের আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, “একেকটা সংগঠন এই টুঙ্গিপাড়ায় আসবে। ১৮-২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ প্রত্যেককে আলাদা আলাদা তারিখ দেওয়া হয়েছে। তারা টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠান করবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বোন শেখ রেহানার নির্দেশে টুঙ্গিপাড়ায় ‘মুজিব লোকজ মেলা’ করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২১ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে মুজিববর্ষ লোকজ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। গ্রাম বাংলায় চিরায়ত বৈচিত্র তুলে ধরতে নানা ধরনের আয়োজন থাকবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।”

(টিকেবি/এসপি/মার্চ ১৮, ২০২২)