শিতাংশু গুহ


খিলগাঁও দেব-মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর করে ইজাজুল ইসলাম খাঁন। সিসি-ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, মাথায় কালো টুপি, কালো প্যান্ট ও পাঞ্জাবী পরে তিনি মন্দিরে ঢুকেন, মিনিট তিনেক পরে কাজ সেরে বেরিয়ে আসেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং বলার চেষ্টা করে যে, লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। স্থানীয় লোকজন আপত্তি করলে পুলিশ স্বীকার করে যে, ইজাজ উগ্রবাদী, জঙ্গী এবং তাঁর বাসা থেকে চাপাতি, জ্বিহাদী বই ও কাগজপত্র উদ্ধার করে। ইজাজুলের স্বজনরা পুলিশকে জানিয়েছে যে, ইজাজ বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন আচরণ করছিলো। 

‘এই পাগলকে নিয়ে যাবে সেই পাগলের দেশে–’ । ক’দিন আগে কুমিল্লায় ইকবাল দূর্গা মণ্ডপে কোরান রেখেছিলো। পুলিশ প্রথমে তাকে ‘পাগল’ বলেছে। পুলিশ বারবার অপরাধীকে বাঁচাতে চাইছে। মূর্তিভাঙ্গা বাংলাদেশে অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়, কারণ রাষ্ট্রটি’র একটি ধর্ম আছে, পুলিশ সেই ধর্মবলম্বীদের পক্ষে স্বজনপ্রীতি করে ও করবে? অতীতে মন্দির আক্রমন বা প্রতিমা ভাঙ্গার প্রায় প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ অপরাধীকে ‘পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে, এমন ঘটনা অসংখ্য। হুজুররা মূর্তি ভাঙ্গার পক্ষে ওয়াজ করেন, মুরিদরা মূর্তি ভাঙ্গবে এটাই তো স্বাভাবিক, তাই-না? এজন্যে হয়তো পাগলে দেশ ভরে গেছে?

বাংলাদেশে এই পাগলরা জাতে পাগল, তালে ঠিক! এঁরা শুধু মন্দির চিনে? ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’, ধরা পড়লে ‘পাগল’। এই পাগলরা আসলে ধর্ম কায়েমের সংগ্রাম চালাচ্ছে, সমস্যাটি সেখানে। ধর্ম পালনে সমস্যা নেই, সমস্যাটি ধর্ম কায়েমে। আপত্তি সেখানে। এজন্যে পুলিশ ওয়ারী মন্দিরে আক্রমণকারী শফিউল্লাহ-কে ধরতে পারছে না? দু’শ লোক মন্দির আক্রমন করলে পুলিশ বলতে পারেন, ‘ওঁরা আমাদের কথা শুনছে না’? বাংলাদেশের মানুষ জানেই না বা জানতে চায়না, বা মানতে চায়না যে দেশে হিন্দুর ওপর অত্যাচার হচ্ছে? দেশে সবাই ভাবের পাগল!

‘পাগল’ সার্টিফিকেট পুলিশ দিচ্ছে, ডাক্তার বা মনোবিজ্ঞানী নন। বাংলাদেশের দেশের পুলিশ তাই একাধারে ডাক্তার ও মনোবিজ্ঞানী, ‘একের ভেতরে তিন’। চট্টগ্রামে স্বরস্বতী দেবীর ৩৫টি মূর্তি ভাঙ্গার পর সংবাদ প্রতিদিন ১৫ই জানুয়ারী ২০২২ পুলিশের এ বক্তব্য ছাপা হয়, “কেউ পরিকল্পিতভাবে প্রতিমাগুলো ভেঙ্গেছে বলে মনে হয়নি। ছোট বাচ্চারা হয়তো খেলার ছলে বা ঠেলাগাড়ি, মিনি-ট্রাকে বাঁশ নেওয়ার সময় অন্ধকারে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি’। কি বুঝলেন? আর ওই যে ‘তদন্ত’, ওটা কোনকালে শেষ হবেনা!

ওয়ারীতে ২শ’ মানুষ রাতে বেলায় রাধাকান্ত জিয়া মন্দিরে হামলার প্রেক্ষিতে বিবিসি বাংলা ১৮ই মার্চ ২০২২ একটি প্রতিবেদনে পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে, “হামলার অভিযোগ সঠিক নয়। জমির মালিকানা দাবিদার একটি পক্ষ সেখানে সংস্কার কাজ করার সময় পুরোনো দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। তবে হামলার অভিযোগ ওঠার পর মন্দিরটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে”। বিবিসি নিউজটি টুইষ্ট করেছে। পাঠক, ৬০/৭০’র দশকের বিবিসি বাংলা, আর এখনকার বিবিসি বাংলা এক নয়, ওদের নিউজ প্রায়শ: এন্টি আওয়ামী লীগ, এন্টি ভারত এবং এন্টি হিন্দু। ওরাও পাগলের সমর্থক।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।