গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল বলেছেন, 'গঠনতন্ত্রের বাইরে গঠিত হওয়া সদ্য ঘোষিত প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত ছাত্রলীগের কোন কমিটিকে কখনই আমার নির্বাচনী এলাকায় মেনে নেয়া হবে না। ছাত্রলীগ যেহেতু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একটি সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন। সেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সংসদ সদস্য হিসেবে সেই ছাত্রলীগের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্বও আমার রয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই ছাত্রলীগের কমিটিতে কোন অছাত্র, বিবাহিত, বয়স্ক কিংবা কোন বিতর্কিত কাউকে রাখা হলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোনভাবেই আমি সেই প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত কমিটিকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা।'

আজ শুক্রবার বিকেলে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে দেওয়া এক একান্ত স্বাক্ষাৎকারে সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল এ প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে সুস্পষ্টভাবে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

আজ ১ এপ্রিল দুপুরে সাংসদ মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুলের ফেসবুক পেইজ (ব্যক্তিগত আইডি) থেকে সদ্য ঘোষিত নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সাথে 'আমার (সাংসদ) কোন ধরণের সম্পৃক্তা নেই এবং থাকবেও না' এ মর্মে একটি পোস্ট দেয়ার পর এ নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে সাংসদ বুলবুল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে এভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন।

একজন সাংসদ হিসেবে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে এমন বিবৃতি কিংবা পোস্ট তিনি দিতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ প্রস্ততুতকারী প্রতিষ্ঠান বিকন ফার্মার কর্ণধার সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, 'আসলে ফেসবুকে বিবৃতিটি দেওয়ার ইচ্ছে আমার কখনই ছিলনা। কিন্তু যখন দেখলাম, সদ্য ঘোষিত নবীনগর ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির নেতারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে নানাভাবে পোষ্ট দিয়ে আমাকে নানাভাবে বিভিন্ন মহলে 'বিব্রত' করা হচ্ছে, ঠিক তখনই জনমনে আসাকে নিয়ে তৈরী হওয়া একটি অনুমাননির্ভর বিভ্রান্তি দূর করতেই আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এরকম একটি পোষ্ট দিতে বাধ্য হয়েছি। তানাহলে আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ তথা নবীনগরবাসি হয়তো ভাবতেন, এ কমিটির পেছনে আমার হাত ছিল, অনুমতি ছিল কিংবা এ কমিটি আমিই করিয়েছি। তাই আমার অবস্থানটিকে পরিষ্কার করতেই আমি ছাত্রলীগকে নিয়ে এরকম একটি পোষ্টটি দিতে বাধ্য হই।

তিনি আরও বলেন, তবে সবচেয়ে দু:খজনক হল, ছাত্রলীগের জেলা কমিটি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাকে কিছুই অবগত করেনি। এটি বড়ই কষ্টদায়ক। তারা আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতেন।

সাংসদ দৃঢ়তার সাথে বলেন, নবীনগরে ছাত্রলীগের কমিটিতে কারা থাকবেন, এ নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কাছে আমার কোন ডিমান্ড কিংবা চয়েজও ছিলনা। আমার কথা ছিল একটাই- কমিটি হতে হবে সম্পূর্ণ গঠনতান্ত্রিক উপায়ে প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে। যেখানে বিতর্কিত অছাত্র, বিবাহিত, বয়স্ক এসব ছাত্রনেতার বদলে, থাকবেন সত্যিকারের মেধাবীরা। সেজন্য জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে আমি বহুবার ফোনে আমার মতামত জানিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও কেন জেলা কমিটি আমার মতামতকে কোন মূল্যায়ণ না করে এ ধরণের বিতর্কিত একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করলো, সেটি কোনভাবেই বুঝতে পারলাম না।

তিনি এ ধরণের বিতর্কিত কমিটিতে তাঁকে (সাংসদ) জড়িয়ে ফেসবুক কিংবা গণমাধ্যমে কোন ধরণের বক্তব্য বিবৃতিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের সঙ্গে কথা বললে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বিকেলে বলেন, 'সাংসদ বুলবুল ভাইয়ের কনসার্ন নিয়েই আমরা নবীনগরে ছাত্রলীগের দুটি আহবায়ক কমিটি দিয়েছি। তবে এটা সত্য, তাঁর পছন্দ অনুযায়ি তিনি লিখিতভাবে যে কমিটি আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, আমরা শতভাগ সেরকম কমিটি তাঁকে দিতে পারিনি। তবে তাঁর পছন্দ অনুযায়ি 'আহবায়ক'সহ অনেককেই আমরা এ কমিটিতে রেখেছি।'

শোভন আরও বলেন, 'আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেই নবীনগরে একটি 'চেক এন্ড ব্যালেন্স' কমিটি মাত্র তিন মাসের জন্য দিয়েছি।
তিন মাস পর তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারলে, কমিটি অটোমেটিকেলি ভেঙ্গে যাবে।'

প্রসংগত, 'নবীনগরে ছাত্রলীগের নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ও থাকবেনা। কারণ, সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে বীরগাঁও ইউনিয়নের বিএনপির এক নেতার পুত্র আল আমীনের প্রভাবিত এরকম বিতর্কিত কমিটি, আওয়ামীলীগের একজন সাংসদ হিসেবে আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনা উল্লেখ করে আজ শুক্রবার দুপুরে সাংসদ এবাদুল করিমের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে নবীনগরের সর্বত্র এখন তুমুল আলোচনার ঝড় বইছে। চলবে....


(আগামীকাল পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব)

(জিডি/এসপি/এপ্রিল ০১, ২০২২)