স্টাফ রিপোর্টার : সরকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে সারাদেশে এক তলাবিশিষ্ট তিন হাজার বাড়ি তৈরির প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সেগুলোর অধিকাংশ সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারাই পেয়েছেন। দুস্থদের কপালে তেমন একটা জোটেনি।

এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রামাঞ্চলের দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে ২০১১ সালে প্রথম আবাসন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় গ্রামে বসবাসকারী দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের স্ব-স্ব ভিটেমাটির ওপর সরকারি অর্থায়নে সাড়ে ৩শ' বর্গফুটের ৩ কক্ষবিশিষ্ট একতলা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি তাদের বাড়িতে রোপণের জন্য তিন ধরনের গাছ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১৮ কোটি টাকা। প্রতি বাড়িতে ব্যয় ধরা হয় ৫ লাখ টাকা।

প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় গ্রামের সাড়ে তিন হাজার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকা তৈরির কাজ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে। বর্তমানে ৭শ' বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১২০টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই দুস্থ নয়, অনেকটা সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের বসতভিটায় ঘর তৈরি করার কথা।

কয়েকটি জেলায় সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রকল্প নেওয়া হলেও তারা অধিকাংশই বঞ্চিত হয়েছেন। কারণ তারা ঘুষ দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এছাড়া তাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ কম। ঘর পাওয়ার তালিকায় এমন ব্যক্তিদের নাম রয়েছে যাদের নিজেদের বাড়ি আছে। কৃষি জমির পরিমাণও নিতান্ত কম নয়। ঘর পাওয়ার তালিকায় সরকারি চাকুরেও রয়েছেন। বাড়িতে পাকা বাড়ি রয়েছে- এমন ব্যক্তিরাও ঘর পেয়েছেন দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। গ্রামে বসবাসকারি হিসেবে তারা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। কোনো কোনো উপজেলায় দেখা গেছে, পঙ্গু না হওয়া সত্ত্বেও তাকে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। কোনো উপজেলায় সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজের নামেও ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজের ছেলেমেয়ে বা তার স্ত্রীর নামে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, যাদের শুধু ভিটেমাটি ছাড়া অন্য কোনো সহায়-সম্বল নেই, কেবল তাদেরই প্রথম পর্যায়ে এ প্রকল্পের আওতায় বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা। বাড়িটি হবে সাড়ে ৩শ' বর্গফুট বিশিষ্ট তিন রুমের ১ তলা বাড়ি। একটি স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থাও থাকবে। পাশাপাশি তাদের বাড়ির পরিবেশ সংরক্ষণে ফলদ, ভেষজ ও বনজ- এ তিন ধরনের গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। দুস্থদের কোনো টাকা দিতে হবে না। সরকারি অর্থায়নেই এগুলো নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে সরকারের ব্যয় হবে ৫ লাখ টাকা।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ২৬, ২০১৪)