এম এ হীরা, গোয়ালন্দ : দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট। এই ঘাট দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহি বাস, পণ্য বোঝাই ট্রাক ও যাত্রীরা পদ্মা নদী পার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে পৌছে। সেখান থেকে ঢাকাসহ যে যার গন্তব্যে রওনা দেয়। কিন্তু গত মাস খানেক ধরেই দৌলতদিয়া পাটুরিয়া এই নৌরুটের দুই প্রান্তে ফেরীতে উঠার সিরিয়ালে আটকে থাকছে শত শত যানবাহন। যার অধিকাংশই পণ্যবাহি ট্রাক।

রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের চাপ কমাতে কয়েক বছর আগে প্রশাসনের উদ্যোগে দৌলতদিয়া থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড় হতে রাজবাড়ী জেলার দিকে কল্যানপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার ট্রাকগুলো কে সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়। দৌলতদিয়া ঘাট ও কল্যানপুরে দুই দফায় সিরিয়ালে আটকে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ট্রাকের চালকেরা। এমন পরিস্থিতিতে তারা শুধু অসহায়ের মত সময়ের প্রহর গুনছে। গোয়ালন্দ মোড়ে দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থেকে এই ভোগান্তিতে মরার উপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে সিরিয়াল বাণিজ্য।

গোয়ালন্দ মোড়ে আটকে থাকা ট্রাক চালকেরা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন শত শত ট্রাক আটকা থাকলেও দালাল চক্রের মাধ্যমে অনেক ট্রাক সিরিয়াল ভেঙ্গে সড়কের ডান পাশ দিয়ে দৌলতদিয়ার উদ্দেশ্যে চলে যায়। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় পর্যন্ত চলে এ অবৈধ্য কার্যক্রম। মোড়ে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক বিভাগের কাছে অভিযোগ করলেও মেলেনা কোন সুরহা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজবাড়ী,কুষ্টিয়া,যশোর,পাবনা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ট্রাকগুলো রাজবাড়ী জেলা শহরের বড়পুল মোড় থেকে গোয়ালন্দ পৌছানোর আগেই তাদের কে কল্যানপুরে সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়। পাশাপাশি ফরিদুপর, খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ভাঙ্গা সহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল থেকে ছেরে আসা পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলোকে দৌলতদিয়ার দিকে যেতে না দিয়ে রাজবাড়ী জেলার দিকে ঘুরিয়ে সিরিয়ালে রাখা হয়। এই সিরিয়ালে আটকে থাকা ট্রাকগুলোকে দৌলতদিয়া থেকে সিগনাল পেলে স্বল্প সংখ্যক ছেরে দেয়ার কথা। কিন্তু এখানেই হচ্ছে সিরিয়াল বাণিজ্যের খেলা। অপেক্ষমান শত শত ট্রাক দাড়িয়ে থাকলেও সবার পিছনের ট্রাকটিও যোগসাজসে সবার প্রথমে সিরিয়াল নিচ্ছে। এটি দেখে অন্য ট্রাক চালকেরা অভিযোগ দিলেও তাদের কে কোন পাত্তা দেয়া হচ্ছেনা।

গোয়ালন্দ মোড়ে সিরিয়ালে আটকে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রাক চালকেরা জানান, গত ২ দিন ধরে রাস্তাতেই বসে আছি। ট্রাকের চাকা ঘুড়ছে না। ঘুড়বে কি সিরিয়াল থেকে তো একটা গাড়ীও চলছেনা। কবে যে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে পৌছে ফেরীতে উঠবো জানি না। এতো ভোগান্তি আর সহ্য হয় না। রাজবাড়ীর কল্যাণপুরের রাস্তাতে বসেই যদি ২ দিন কেটে যায় তাহলে গন্তব্যে যাবো কবে। তারপর আবার সিরিয়াল বাণিজ্য চলছে। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে পিছনের গাড়ীও সবার আগে যাচ্ছে। আমরা টাকা দিতে পারছিনা বলে সিরিয়ালেই আটকে বসে থাকছি। আসলেই কি দৌলতদয়িা পাটুরিয়া নৌপথে ফেরী ১৭ টা চলে নাকি কম চলে কে জানে সে কথা। রাস্তায় বসে আমরা পত্রিকা পড়ছি।গল্প করে সময় কাটাচ্ছি। এখন তো রাস্তায় আমাদের গাড়ি চালানোর কথা। রাস্তায় বসে বসে কি আর সময় কাটে। কল্যানপুর এলাকায় বসায় রাখছে। রাস্তায় কোন খাবারের দোকান নেই। গোসল বা টয়লেটের কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা বড় অসহায়। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য চাই দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি কমাতে হবে। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ট্রাক চালকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়ালন্দ মোড়ে দায়িত্বরত টি এস আই শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে, যানজটের কারণ হিসেবে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মায় পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌ চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। নাব্য সংকট নিরসনে ড্রেজিং করে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেরিগুলোকে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় পন্টুন নিচু হয়ে গেছে। ফলে ঘাট থেকে সড়ক উঁচু হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায়ও সময় বেশি লাগছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। এসব কারণে বেশ কিছুদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানজট লেগেই থাকছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার চলমান রয়েছে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। পণ্যবাহী ট্রাকের বাড়তি চাপ থাকায় ঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

(এইচ/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২২)