গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক, বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী সদ্য প্রয়াত হাসান আরিফ স্মরণে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত একটি লাইভ স্মরণ অনষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, '৪৭ এর দেশভাগ, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন আর ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধই ছিলো হাসান আরিফের মূল দর্শন। জীবৎকালে  কবিতার এই বরপুত্র তাঁর চিন্তায়, চেতনায়, ভাবনায় ও আদর্শিক জীবনে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতির জনকের সত্যিকারের একটি অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলবার জন্য এ তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনাকেই বারবার তিনি কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন।'

গতকাল বুধবার রাতে হাসান আরিফ স্মরণে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত একটি স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে প্রচারিত দর্শকনন্দিত জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথার ১৩০-তম পর্বের ভার্চ্যুয়াল এ লাইভ স্মরণ অনুষ্ঠানে 'মূখ্য আলোচক' ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস।

ভার্চ্যুয়াল এ আলোচনায় অংশ নিয়ে গোলাম কুদ্দুস তাঁর বক্তব্যে বলেন,'হাসান আরিফ মূলধারার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন নিবেদিতপ্রাণ বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মেধাবী সংগঠক। তাঁর মতো মেধা সম্পন্ন ও সাংগঠনিক ধীসম্পন্ন কর্মঠ ও নির্লোভ সাংস্কৃতিক সংগঠক আবার এদেশে কত বছর পর জন্মাবে আমরা সেটি জানিনা।

তিনি বলেন, আজকাল একদিকে সংস্কৃতি বিরোধী অপশক্তির উথ্যান, অপতৎপরতা; আরেকদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের এক ধরণের উদাসীনভাব এবং সংস্কৃতিকে নিয়ে নানাভাবে চলা রমরমা বাণিজ্য আমাদেরকে প্রতিনিয়ত চিন্তিত করে তুলছে। ঠিক এ সময় যখন হাসান আরিফের মতো আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত একজন লড়াকু সাংস্কৃতিক বীর সংগঠকের খুবই দরকার ছিল, তখনই তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন। তাঁর এই অকাল প্রয়াণ তাই আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে গেল। কারণ, হাসান আরিফের এ শূণ্যতা সহজে কখনও পূরণ হবে না।

গোলাম কুদ্দুস আরও বলেন, 'প্রায় চারমাস ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও তিনি যে অসীম সাহসীকতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, সেটিও আমাদের জন্য কম শিক্ষণীয় নয়? মৃত্যুর মাত্র ৭ দিন আগেও তিনি যে মানবিকতার কল্যাণে তাঁর বিশাল দেহখানা মেডিকেলে দান করে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে গেছেন, সেখানেও আমরা কিন্তু আরেক মানবিক হাসান আরিফকে খুঁজে পাই। সুতরাং শারীরিকভাবে তিনি আমাদের সঙ্গে না থাকলেও, আজীবন সৃজনে সংগ্রামে থাকা এ মানুষটির আদর্শকে যুগ যুগ ধরে এদেশের সংস্কৃতসেবীরা মননে বহন করে যাবে।

দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও নবীনগরের কথার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর পরিকল্পনা ও প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী কাজী মাহতাব সুমন, শিক্ষক ও গবেষক ড. আরশাদ হোসেন, শিক্ষক ও আবৃত্তি শিল্পী ফেরদৌসী লাকী, ত্রিপুরার ধর্ম্মনগরের শিক্ষক ও বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী নির্ঝর পাল, সৌদি আরব থেকে যোগ দেন তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের সহকারী পরিচালক আবৃত্তি শিল্পী বাছির দুলাল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আবরনি আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ও সম্সিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম সদস্য সাংবাদিক হাবিবুর রহমান পারভেজ।

আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বক্তারা হাসান আরিফকে সম্মান জানিয়ে তাঁর স্মৃতির উদ্দ্যেশে বেশ কয়কটি কবিতা পাঠ করে শোনান।

(জিডি/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২২)