অফিসে আপনি কি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন, আপনার কাজ করার ধরন কি আলাদা, লেখায় কি কোনো ঝামেলা আছে? আর আপনার পোশাক-আশাক ও চলাফেরাই বা কী রকম? এসবই বলে দেবে আপনি কতটা পেশাদার না অ্যামেচার।

আপনার পেশা যেটাই হোক, পেশাদারিত্ব না থাকলে পেশাজীবনটাই মিছে! আপনি কতটা পেশাদার, তা ভেবে দেখা দরকার। অ্যামেচার হলেও বদলে নেয়া যায় নিজেকে। অ্যামেচার জীবনযাপন হয়ে গেছে স্বভাবজাত এবং এটাকেই স্বাভাবিক মনে করা ঠিক নয়। সমস্যাটা হয় তখনই যখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যাই। বড় কোনো কর্পোরেট হাউসে কাজ করতে গেলে সেখানেও একই সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ অফিস আশা করে পেশাদার অ্যাটিচিউড। আর তা অনেকেই এ ব্যাপারে তাল মেলাতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, যুগ পাল্টেছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পেশাদারি না থাকলে পিছিয়ে পড়তে হবে প্রতিনিয়ত, ধাক্কা খেতে হবে পদে পদে।
হতে হবে পেশাদারি : পেশাদারি না থাকলে পেশাজীবনের ষোলোকলা পূর্ণ হয় না। পেশাদার হতে হলে নিজের মধ্যে কিছু দরকারি গুণ থাকা চাই। প্রথমে হওয়া চাই শতভাগ সত্। সততা থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানের সব বিষয়ে। একজন পেশাদার কর্মী শুধু তার কাজের প্রতি নন, প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাবের প্রকাশ করতে হবে। অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে সবচেয়ে ছোট পদে যারা আছেন, সবার কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা চাই। অন্যকে সম্মান না দেখালে তাদের কাছ থেকে সম্মান ও পেশাদারি মনোভাব আশা করা যায় না।
যোগাযোগেও চাই পেশাদারি : পেশাজীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখে না। যা মোটেও উচিত নয়। নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগে নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা নতুন সুযোগ তৈরি করে। এগুলো জরুরি বিষয়। প্রতিষ্ঠান ও কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়াটাও পেশাদারির অন্যতম প্রধান উপাদান। প্রতিষ্ঠানের প্রতি যদি নিষ্ঠা, আর নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগের মনোভাব না থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানও আপনার কাজকে স্বীকৃতি দেবে না। এর সঙ্গে বাড়িয়ে নিতে হবে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর জ্ঞানের পরিধি। ব্যক্তিগত উন্নয়ন হলেই তো প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হবে। আর একজন পেশাদার প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে ফেলার চষ্টো করেন। কাজসংশি্লষ্ট পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ, বেশি বেশি কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। এসবের মধ্য দিয়েই নিজের উন্নয়ন যেমন সম্ভব, এর মধ্য দিয়েই হতে পারে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি।
আপনি কি পেশাদার : কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়। অনেক কাজ করতে হয়, অনেক জনের সঙ্গে মিশতে হয়। কিন্তু বুঝবেন কী করে সেটা অ্যামেচার না পেশাদার অ্যাটিচিউডের মধ্যে পড়ে।
আপনি আসলে কোন ধরনের
১. আপনি কি পেশাদার কাজের ধরনটা বুঝে উঠতে চান সবার আগে। কিন্তু অ্যামেচাররা সম্ভব হলেই কাজে ফঁাকি দেয়ার চষ্টো করেনই।
২. একজন পেশাদারের কাছে সব কাজই সমান, সেটা সহজ কিংবা খুব জটিলই হোক। অন্যদিকে অ্যামেচাররা সব সময় কঠিন কাজ ও বড় দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন।
৩. পেশাদাররা নিজেরাই ঠিক করে নেন, কাজের প্রয়োজনে কী করতে হবে। কিন্তু অ্যামেচাররা তা ঠিক করেন অন্যেরটা দেখে।
৪. পেশাদাররা সব বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। কিন্তু অ্যামেচারদের কাজই হলো নেতিবাচক মনোভাব দেখানো।
৫. নির্দষ্টি সময়ের মধ্যে কাজ যদি শেষ হয় যায়, বুঝে নেবেন এটাই পেশাদারি। অ্যামেচাররা কোনো কাজ সময়মতো শেষ করেন না এবং কাজ অসমাপ্ত রেখে জটিলতার সৃষ্টি করেন।
৬. সঠিক চিন্তা এবং কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বজায় রাখেন একজন পেশাদার। অ্যামেচারদের বেলায় এটা নেই।
৭. একজন পেশাদার ফরমাল পোশাক আর অফিসিয়াল কথাবার্তায় অভ্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে অ্যামেচাররা এসব বিষয়ে মোটেও সচেতন নন।
৮. পেশাদাররা কোনো কাজে ভুল হলে তা অবলীলায় স্বীকার করেন। কিন্তু অ্যামেচাররা ভুলকে লুকানোর চষ্টো করেন।
৯. পেশাদাররা প্রত্যাশারও বেশি কাজের আউটপুট বের করতে সক্ষম। অন্যদিকে অ্যামেচাররা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজে হাত দেন না।
১০. অ্যামেচাররা সব সময় হীনমন্যতায় ভোগেন। মনে করেন কাজের মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। পেশাদাররা কাজের স্বীকৃতির জন্য নয়, কাজ করেন অফিসের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই।
আপনিও হতে পারেন পেশাদার কর্মী : নিজের মধ্যে পেশাদারি আছে কি না, নিশ্চয়ই যাচাই করে নিয়েছেন। যদি পেশাদারিত্ব থাকে, কীভাবে এটিকে আরো উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার চেস্টা যেন আপনার মধ্যে থাকে। আর যদি না থাকে তাহলে বদলে ফেলুন নিজেকে। হয়ে উঠুন টিমওয়ার্কার, এতে অন্যদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাবেন। ক্রমাগত নিজের উন্নতি করতে হবে, তবেই হতে পারবেন পেশাদার।
(ওএস/এইচআর/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪)