শিতাংশু গুহ


শিক্ষক হৃদয় মন্ডল জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সু-সংবাদ। সরকারকে ধন্যবাদ। যাঁরা ষড়যন্ত্রের শিকার নিরপরাধ এই শিক্ষকের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন সবাইকে ধন্যবাদ। এ ঘটনা প্রমান করে মানুষ সোচ্চার হলে অন্যায় ঠেকানো সম্ভব। হৃদয় মন্ডল জামিন পেয়েছেন, মুক্তি নয়, তাঁকে সকল মামলা থেকে মুক্তি দেয়া হোক। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। একাত্তর টিভি’র রুপা চমৎকার রিপোর্ট করেছেন। দেখা যাচ্ছে, ১জন শিক্ষক, ১জন ব্যবসায়ী, ২জন ছাত্রকে দিয়ে এ অপকর্ম করিয়েছে। এঁদের ধরা হউক, এদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ‘চিচিং ফাঁক’, সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে। হৃদয় মন্ডল ধর্মের অবমাননা করেননি, করেছেন ওই ৪জন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে তাঁদের সোপর্দ করা হউক। ২ছাত্রের বিরুদ্ধে কঠোর হবার প্রয়োজন নেই, তবে সঠিক তথ্য জানার দরকার আছে। জানতে ইচ্ছে করে, এদের মা-বাবা কেমন? আমাদের সময় হলে আমাদের অভিভাবক আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিতো। 

শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সবাই কমবেশি অন্যায় করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে, তা দায়ের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন, তা নেয়া হয়নি। এই একটি কারণে মামলাটি খারিজ হতে পারে এবং অভিযুক্ত শিক্ষক মুক্তি পেতে পারেন। ম্যাজিষ্ট্রেট কেন হৃদয় মণ্ডলকে জেলে ঢুকলেন, তাও অস্পষ্ট। এজন্যেই হয়তো কবিগুরু বহু বছর আগে বলেছিলেন, ‘রাজা যত বলে, পারিষদ বলে শতগুন –’। সবাই মিলে যেন ধর্ম রক্ষায় এক নিরীহ শিক্ষককে শাস্তি দিতে উদ্যত ছিলেন। রমজান শুরু হবার পরে তিন শিক্ষক লতা সমাদ্দার, হৃদয় মন্ডল, আমাদিনী পাল ঘটনা। দৈনিক ভোরের কাগজ লিখেছে, ‘হিজাব নিয়ে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লোটার পাঁয়তারা/ ত্রিমুখী দ্বন্দের জেরেই হিন্দু শিক্ষিকাকে ফাঁসানোর চেষ্টা। ধর্মরক্ষা তো অজুহাত, স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সবাই ফায়দা লোটার জন্যেই ধর্ম অবমাননার কাহিনী সাঁজিয়ে প্রকারান্তরে নিজেরা নিজের ধর্মকে অপমান করছে এবং বিদেশে দেশের সুনাম নষ্ট করছে।

আমোদিনী পালের ঘটনাটা দেখা যাক। নওগাঁয় আমোদিনী পাল নামে এক স্কুল শিক্ষিকা স্কুল ড্রেস পরে না আসার জন্যে ৩জন ছাত্রীকে বেত দিয়ে মারেন। তাদের পরনে হিজাব বা বোরখা ছিলোনা। একজন শিক্ষক বদিউল আলম একই কারণে ছাত্রদের মারেন। বেত দিয়ে মারা আমাদের দেশে স্বাভাবিক ঘটনা। গুজব বেরোয় হিন্দু শিক্ষিকা হিজাব পরে আসায় ১৮-২০জন মুসলিম ছাত্রীদের মেরেছেন। আর যায় কোথা? স্থানীয় এক সাংবাদিক ফেইসবুক লাইভ দিয়ে প্রানপনে চেষ্টা করেন যে, আমোদিনী সত্যি সত্যি হিজাবের কারণেই ছাত্রীদের মেরেছেন। দুই ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবক এখানে মিথ্যা লাইভ দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে বিনোদিনীকে মরিয়া প্রমান করতে হইয়াছে যে সে মরে নাই; এবার আমোদিনীকে চাকুরী হারিয়ে বা জেল খেটে প্রমান করিতে হইবে যে তিনি ‘অনুভূতিতে’ আঘাত দিয়েছেন। আমোদিনী শব্দের অর্থ ‘যিনি আমোদে থাকেন’, আমোদিনী পাল এবার টের পাবেন ৯০% সংখ্যাগুরুর দেশে তিনি কতটা আনন্দে আছেন বা থাকবেন।

রোজার মধ্যে আরো দু’চারটি ঘটনা দেখি? জান্নাতুল ফেরদৌস, ২৭ নামে এক যুবক জয়পুরহাটের কালিয়া উপজেলার হাটশেখা গ্রামের ‘মাদার তেরেসা গীর্জায়’ ঢুকে তেরেসা’র মূর্তি ভাংচুর করে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। মধুখালীতে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ির মন্দিরের বিভিন্ন প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (সমকাল ৮ই এপ্রিল) রাতের কোনো এক সময় উপজেলার বাগাট দাসপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানা যায়, জেলা পরিষদ সদস্য ও বাগাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক দেব প্রসাদ রায়ের বাড়ি বাগাট দাসপাড়ায় নিজস্ব মন্দিরে এ ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে হিজাব পড়ায় ছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া। (নয়াদিগন্ত ২৯শে মার্চ ২০২২)। এটি রোজার ঠিক আগের ঘটনা। নয়া দিগন্ত নামে এ মিডিয়ায় হিন্দু বিদ্বেষ কতটা প্রবল যে এঁরা একজন বড়ুয়াকে হিন্দু হিসাবে চিহ্নিত করতে কুন্ঠা বোধ করেনি?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।