দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : বিধবা বীনা রানী (৪০) মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে আয়ের অর্থ সঞ্চয় করতে জমা রেখেছিল উদয়ন সঞ্চয় সমিতিতে। সেই এনজিও একদিন ২৭০০ গ্রাহকের প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। গ্রামের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের টাকা ফিরে পেতে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।

প্রায় ১০ বছর আগে বিনা রানীর স্বামী পরিমল মারা গেছেন। তার একমাত্র কন্যা সন্তান তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এই কন্যার বিয়ের জন্য ওই সমিতিতে ২০০ টাকা করে জমা রেখেছিলেন বীনা রানী। স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিবেন। হঠাৎ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার, এনজিও উধাও।

শাড়ির আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বীনা রানী বলছিলেন তার ১৫ বছর ধরে সঞ্জিত প্রায় ২ লক্ষ টাকা ফিরে পেতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

ফরিদপুর সদরের বাচ্চার ইউনিয়নের ধুলদি রাজাপুর গ্রামের কোরবান বেপারীর দুই ছেলে এমএ করিম ও সাইফুল ইসলাম সানাল। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করতে এমএ করিম প্রাণসঞ্চয় সমিতি ও সাইফুল ইসলাম সানাল উদয় সঞ্চয় সমিতির নামে দুটি সমিতি খুলে ফাদ পেতে বসেন। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম তারা। ১০০ টাকায় ১০ বছর মেয়াদে টাকা জমা রাখলে চল্লিশ হাজার টাকা ফেরত দেবে বলে তারা গ্রাহক জোগাড় করেন। একে একে ফরিদপুর রাজবাড়ী জেলা থেকে প্রায় ২ হাজার সাতশত গ্রাহক জোগাড় করে। আবার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে টাকা ও স্বর্ণালংকার গচ্ছিত রাখত তারা। ২০০৬ সালে হঠাৎ অফিস বন্ধ করে চম্পট দেয় এই দুই ভাই। এ সময় গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

ওই দুই ভাই দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বাড়িতে অবস্থান করছে এমন সংবাদ পেয়ে গ্রাহকরা ছুটে যান তাদের বাড়িতে। কিন্তু টাকা না দিয়ে করিম ও সানাল হুমকিও ভয় দেখিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়।

সোমবার সকালে উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদি রেলগেট বাজারে গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের ও টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এনজিওর মালিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এসময় গ্রাহকরা এম এ করিম ও সাইফুল ইসলাম সানালের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেন।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোতালেব শেখ, আকাশ শেখ, সালমা বেগম, মইদুল সহ অনেকেই বলেন গচ্ছিত টাকা ফেরত চাইলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয়-ভীতি ও হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন চালায় তারা।

করিম ও সাইফুল দুজনেই সন্ত্রাসী টাকা আত্মসাৎকারী ও বেশ কয়েকটি মামলার আসামি বলে জানান তারা।

গত ৭ এপ্রিল টাকা ফেরত চাইতে গেলে করিম ও সাইফুল টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। এতে গ্রাহকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ওই কথা কাটাকাটির জের ধরে করিম ও সাইফুলের ভাই নূর হোসেন লেলিন বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় ছিনতাইয়ের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে গ্রাহকদের। উক্ত মামলার আসামি হলেন সজীব শেখ, সাকিব শেখ, আকরাম শেখ, জিহাদ মন্ডল ও রেজাউল শেখ।

এদিকে মইদুল ইসলাম টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৭ সালে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা করেন মামলার নং ১৮১। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে আরও ৬ জন গ্রাহক আমানতের টাকা ফেরত পেতে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী সদস্যরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদন্ত সাপেক্ষে ওই দুই ভাইয়ের বিচারের দাবি এবং তাদের গচ্ছিত টাকা ফেরত পেতে আবেদন জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাণ সঞ্চয় সমিতির চেয়ারম্যান এম এ করিম বলেন প্রায় ১৫ বছর আগের ঘটনা। এখন আমাদের কাছে কেউ টাকা পায় না। তিনি দাবি করেন গত ৭ এপ্রিল তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়। এখন মামলা প্রত্যাহারের জন্য তারা এসব মানববন্ধন করছে।

অপরদিকে উদয় সঞ্চয় সমিতির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন আমরা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছি। আমি হাসপাতাল এ আছি আর কোন কথা বলবো না।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

(ডিসি/এএস/এপ্রিল ১২, ২০২২)