আমতলী প্রতিনিধি : নামের সাথে মিল থাকায় মোঃ মনির মীর (৪৬) ডাকাতি মামলার আসামী হয়েছেন। ওই মামলায় বিনা অপরাধে ছয় মাস হাজতবাসে ছিলেন তিনি। হতদরিদ্র মনির মীর গত ছয় বছর ধরে ডাকাতি মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। মনির মীরের অভিযোগ পুলিশ অধিকতর যাচাই বাছাই না করেই তাকে ডাকাতি মামলার আসামী করেছেন। অধিকতর যাচাই বাছাই করলে এমন ঘটনা ঘটতো না। দ্রুত তদন্ত শেষে এ মামলা থেকে তাকে অব্যহতি দেয়ার দাবী জানিয়েছেন তিনি ও তার পরিবার। ঘটনা ঘটেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার কলাবাগান থানার গ্রীন রোডে একটি ফাস্টফুটের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মেহেদী হাসান বাদী হয়ে জালাল (৩৫), হারুন (৩৬), মোঃ নুরুজ্জামান (৩২), শাহাবুদ্দিন (৩৬), এনামুল (২৮), মনির (৩০) ও দুলালকে (৩৪) আসামী করে কলাবাগান থানায় ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- জি আর-৮৭/১৬।

এ ঘটনায় মনিরসহ বেশ কয়েকজন আসামীর পিতার নাম, বংশ ও ঠিকানা অজ্ঞাত রেখে মামলা দেয়া হয়। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ৭ জুলাই পরিদর্শক (অপারেশন) তদন্তকারী কর্মকর্তা আ, ফ, ম, আছাদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই অভিযোগপত্রে মনির এ মামলার ৬নং আসামী। ওই বছরের ১১ নভেম্বর আমতলী উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের এচাহাক মীরের ছেলে মনির মীরকে তার বাড়ী থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। ছয় মাস তিনি হাজতবাস শেষে জামিনে মুক্তি পান। নামের সাথে মিল থাকায় ডাকাতি মামলায় গত ছয় বছর ধরে মনির মীর হাজিরা দিয়ে আসছেন। মনির মীরের অভিযোগ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাচাই বাছাই না করেই মনির গাজীর পরিবর্তে তাকে আসামী করেছেন। মামলার আসামী মনির গাজী এবং তার বাড়ী একই গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের হাতেম গাজীর ছেলে মনির গাজী (৪৪) ঢাকা, চট্টগ্রাম, নীলফামারী, ফেনী ও নাটরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। তার নামে অস্ত্র, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ ৭টি মামলা রয়েছে। ওই মামলাগুলোতে সে এজাহারভুক্ত আসামী। পুলিশ তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে। এদিকে একই গ্রামের এচাহাক মীরের ছেলে মোঃ মনির মীর এলাকায় কৃষি ও কাঠ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৩০ বছরে তিনি এলাকার বাহিরে কোথায়ও যায়নি এমন দাবী মনির মীর ও তার পরিবারের। বাবার নাম ও পদবি ভিন্ন হলেও নামের সাথে মিল থাকায় মনির মীর ডাকাতি মামলার আসামী হয়ে বিনা অপরাধে ছয় মাসের হাজতবাস খেটেছেন। বর্তমানে ওই মামলায় তিনি চার্জসীটভুক্ত আসামী। অধিকতর যাচাই বাছাই না হওয়ায় প্রকৃত আসামী মনির গাজী ডাকাতি মামলার আসামী থেকে অব্যহতি পেয়েছেন কিন্তু নিরাপরাধ ব্যাক্তি মনির মীর আসামী হয়েছেন।

মনির মীর কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, মনির গাজী এবং আমার বাড়ী একই গ্রামে। মনির গাজী ছোট বেলা থেকেই এলাকায় থাকে না। তার সাথে আমার নামের মিল রয়েছে কিন্তু পিতা ও বংশের কোন মিল নেই। পুলিশ যাচাই বাছাই না করেই মনির গাজীর পরিবর্তে আমাকে ডাকাতি মামলার আসামী বানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি গত ৩০ বছরে এলাকার বাহিরে কোথায়ও যাইনি। আমি কিভাবে ঢাকার ডাকাতি করলাম? অপরাধ না করেও আমি ডাকাতি মামলার আসামী হয়ে ছয় মাস জেল হাজতে ছিলাম। দ্রুত এ মামলা থেকে তাকে অব্যহতি দেয়ার দাবী জানান তিনি।

গ্রাম পুলিশ লোকমান মৃধা বলেন, মনির মীর একজন ভালো ও নিরীহ মানুষ। তিনি ঢাকার ডাকাতি মামলায় কিভাবে আসামী হয়? কিন্তু মনির গাজী এলাকায় থাকে না তিনি বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। নামের সাথে মিল থাকায় পুলিশ মনির গাজীর পরিবর্তে মনির মীরকে আসামী করেছে।

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ কামরুল হাসান সেতু মল্লিক বলেন, মনির গাজী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বসবাস করে না। সে একজন দুষ্কৃতিকারী লোক। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নামে মিল থাকায় মনির গাজীর ডাকাতির মামলায় আসামী হয়েছেন মনির মীর নামের এক ব্যাক্তি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে চিহিৃত করে মনির মীরকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার দাবী জানান তিনি।

হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, মনির মীর একজন ভালো মানুষ। মনির গাজীর ডাকাতি মামলায় পুলিশ যাচাই বাছাই না করেই একজন নিরিহ মানুষ মনির মীরকে আসামী করেছেন। নামের মিল থাকলেও পুলিশ অধিকতর তদন্ত করেনি। অধিকতর তদন্ত করলে এমন ঘটনা ঘটতো না। দ্রুত মনির মীরকে এ মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার দাবী জানান তিনি।

তৎকালীন ঢাকা কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আ,ফ,ম, আছাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা ১৬৪ ধারায় যাদের নাম বলেছে তাদের নাম ঠিকানা যাছাই করতে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়েছি। তারা যাচাই বাছাই শেষে আসামী সনাক্ত করেছে। আসামী সনাক্ত করতে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি আরো বলেন, আমতলী থানা পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।

আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, চার্জসিটভুক্ত আসামী মনির মীরকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে তিনি আসামী নন। তবে আদালত আমার কাছে তথ্য চাইলে আমি যাচাই বাছাই শেষে প্রকৃত তথ্য আদালতে দেব। তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগী মনির মীর ও পরিবার মামলার নথি ও কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে আসলে তাদের সহযোগীতা করা হবে।

(এসএন/এসপি/এপ্রিল ১৫, ২০২২)