স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর : মধুখালীতে সৎ ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুরের কর্মকর্তাদের নিষেধ অমান্য করে জোর পুর্বক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে মধুখালী উপজেলার নড়িখালী বায়তুর রহমান জামে মসজিদের সরকারী ঘাটলার নির্মাণ কাজের লেবারদের বাধা প্রদানসহ প্রান নাসের হুমকি দিয়ে একাধিকবার কাজ বন্ধ করে দিলেন জাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম বাচ্চু। এবিষয়ে বাচ্চুসহ ৬জনের নাম উল্লেখ করে  আরো ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে  গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে মধুখালী থানায় একটি চাঁদাবাজীর অভিযোগ পত্র দাখিল করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সৈয়দ শাহিদুল ইসলাম শাহিন। 

মধুখালী থানা ও মধুখালী প্রেসক্লাবে দাখিল করা ওই অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, অভিযুক্ত সামছুল ইসলাম বাচ্চু জানুয়ারী মাসের ৫ তারিখে জাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ওই ঘাটলার নির্মাণকাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসী নিয়ে বারবার ঘাটলার কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। এই অভিযোগ পত্রটি পুলিশ আমলে না নেওয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম বাচ্চু। ২০ এপ্রিল মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিসে অভিযুক্ত সামছুল ইসলাম বাচ্চুকে ডেকে উক্ত ঘাটলার নির্মাণ কাজে বাধা দিতে নিষেধ করেন। ইউএনও অফিস থেকে বেড়িয়ে এসে তিনি মোবাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার সন্তোষ কুমারকে হুমকি দিয়ে বলেন ঘাটলার কাজ বন্ধ না করলে প্রান নাসের ঘটনা ঘটবে।

চেয়ারম্যানের পেশিশক্তির ভয়ে ওই কর্মকর্তা ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ করতে বলেন। ২১ এপ্রিল সকালে চেয়ারম্যান ঘাটলার কাছে এসে লেবারদেরকে প্রান নাসের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। সামছুল ইসলাম বাচ্চু বারবার পেশিশক্তির দাপটে লেবারদের কে প্রান নাসের ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি (সামছুল ইসলাম বাচ্চু) বলেন, আমি জনগনের সুবিধার জন্য ঘাটলাটি সড়ানোর চেষ্টা করছি।

এবিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, আরো দুই বছর আগে মসজিদ কমিটির সভাপতি সাংবাদিক এস.এম আকাশ তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরাসহ এলাকাবাসীদের গোসলের কথা চিন্তা করে আমাদের অফিসে একটি পাকা ঘাটলার আবেদন করেন। সাংবাদিকের আবেদনের পরিপেক্ষিতে জাহাপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোল্যা মো: ইসহাক হোসেনের সুপারিশক্রমে ও এলাকাবাসীর মতামত নিয়েই শরীফ বাড়ীর ঘাটে ঘাটলাটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজও চলমান ছিলো, পরে ওই ইউনিয়ন নির্বাচনে বাচ্চু মোল্যা নামে এক ব্যাক্তি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখন একাধিকবার ওই কাজে বাধা সুষ্টি করে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার লেবারদেরকে প্রান নাসের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিকাদার তার ভয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিকুর রহমান চৌধুরী জানান, নতুন চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম বাচ্চু ঘাটলাটি সড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন জেলা প্রশাসক স্যারের কথায় আমি এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি ঘাটলাটি সুন্দর জায়গায় নির্মান হচ্ছে এবং ঘাটলাটি সবাই ব্যবহার করতে পারবে, কারো কোন অসুবিধা হবেনা। ঘাটলায় যাতায়াতের জন্য সাংবাদিক সাহেব তাহার বাড়ীর উপর দিয়ে পথ দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নতুন চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম বাচ্চু ঘাটলার নির্মান কাজে অবৈধ ভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। আমি তাকে একাধিকবার বলেছি ওই ঘাটলাটি আপনার আগের চেয়ারম্যানের সময় পাশ করা এবং কাজ চলমান, এখন ইচ্ছা করলেও অন্য কোথাও সরানো সম্ভবনা। আপনি ওই ঘাটলার কাজে বাধা সুষ্টি করতে পারেননা, আর যদি অবৈধ পেশিশক্তির দাপটে বাধা সুষ্টি করেন তাহলে আপনার দায়ভার আমরা নেবনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, এই চেয়ারম্যান খুবই বিপদজনক, তার বিরুদ্ধে গেলে যে কোন সময় হামলা মামলার শিকার হতে হয়। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাইনা। স্থানীয়রা জানান, চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি জানাজানী হওয়ার পর চেয়ারম্যান দাঙ্গা বাদিয়ে ঘাটলাটি বন্ধ করার চেষ্টা করছে। র্যাব ও পুলিশের সর্বোচ্চ সহযোগিতা ছাড়া এই দাঙ্গাবাজ চেয়ারম্যানের পেশিশক্তি নস্ট করা যাবেনা।

তারা আরো জানান, এই চেয়ারম্যান বাচ্চু ১২ বছর আগে জাহাপুর ইউনিয়নের চরমুরারদিয়া গ্রামের লাল বাদশা নামে তার এক বন্ধুর বাড়ী ঘর লিখে নিয়ে তাকে হত্যা করে লাশ পদ্না নদিতে ফেলে দেয়। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে অনেক দিন জেল খেটে পরে লাল বাদশার বৌয়ের নামে জালিয়াতি করে লিখে নেওয়া বাড়ীটি ফেরতসহ অনেক টাকার বিনিময়ে আপোষ হয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।

২০১২ সালের ২০ জুলাই তারিখে যশোর জেলার একটি স্থানীয় পত্রিকায় এই চেয়ারম্যানকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়, উক্ত সংবাদে জানা যায়, তিনি ঝিনাইদাহ পৌর বাস টার্মিনাল এলাকার জৈনেক মিন্টু মিয়ার বাড়ীতে ফরিদপুর থেকে কলগাল নিয়ে ফুর্তি করার সময় এলাকাবাসীরা বাড়ীটি ঘেরাও করে কলগালসহ এই চেয়ারম্যানকে বিবস্ত্র অবস্থায় আটক করে গণধোলাই দিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ পরদিন চেয়ারম্যান বাচ্চুকে আদালতে সোপর্দ করে।

এলাকাবাসীরা জানান, এই বাচ্চু ব্যাক্তি হিসেবে নয় দলীয় প্রতীকের কারনে নির্বাচনে জয়লাভ করে এখন নিজেকে মধুখালী উপজেলার সবচেয়ে ক্ষমতাবান মনে করেন। তিনি এখন প্রকাশ্যে মাস্তানী করে সরকারী ঘটলার নির্মান কাজে বাধা দিচ্ছে পুলিশ তাদের কে কিছুই করছেনা। এবিষয়ে মধুখালী থানার সার্কেল এএসপি সুমন কর জানান, যদি কেউ ঘাটলা নির্মানে বাধা দেয় তাহলে তারবিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ডিসি/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০২২)