রিপন মারমা, রাঙামাটি : ঈদের বাকি কয়েক দিন ইতিমধ্যে জমে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙামাটিতে  ঈদ বাজার। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণী-বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রোদ ও গরম উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজনদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে রাঙামাটি বিপণী-বিতানগুলোতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। এ বছর রোজার শুরু থেকে শপিংমলগুলো খোলা থাকায় গত দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে, পুরো রমজান মাস জুড়ে শপিংমল খোলা থাকায় ধীরেসুস্থে কেনাকাটা করতে পারছেন বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

অন্যদিকে ব্যস্ত সময় পাড় করছে দরর্জি পাড়াগুলোও। তবে চড়া দামের গরম বাজারে পছন্দে পোশাক কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। যদিও ঈদের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোবাইল কোর্ট অভিযান অব্যাহত রেখেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। তবুও স্বস্তি ফিরেনি শপিং মলগুলোতে। সুযোগ বুঝে চড়া দামে বেচা-বিক্রি অব্যাহত রেখেছে ব্যবসায়ীরা।

এদিকে লিচু বাগান কাপ্তাই সড়কে পাশে এবং বাঙাহালিয়া মার্কেটসহ বড় বড় অভিজাত বিপণী বিতানের পাশাপাশি ঈদের ছোঁয়া লেগেছে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদামে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্তও চলছে কেনাবেচা। ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে টেবিল বসিয়ে পণ্যের পসরা নিয়ে বসা এই শহরের পুরনো চিত্র। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে তিন চাকার ভ্যানগাড়ি। এখন ফুটপাতের পাশে ভ্যানগাড়িতেও ঈদের বাজারের কেনাকাটা চলছে পুরোদমে।

তবে, এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললেই চলে। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই; সামাজিক দূরত্ব মানার ন্যূনতম প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়নি। দু একজন মাস্ক পড়লেও অনেকের মাস্কই সঠিকভাবে পরা ছিল না। ক্রেতাদের সমাগমের কারণে মার্কেটগুলোর সামনের রাস্তাতে দেখা যায় দীর্ঘ যানজট। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়েও বেগ পেতে হয় পথচারীদের।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) রাঙামাটিতে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজার, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, কাপ্তাই নতুন বাজার, দোবাশি বাজার, বাঙাল হালিয়া মার্কেট, বিএম শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বিপণি বিতানগুলো এখন জমজমাট। অসংখ্য ক্রেতার আনাগোনা সরব উপস্থিতিতে মার্কেটগুলোতে যেন উৎসবের জোয়ার বয়ছে। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ঈদের কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন শপিং মল, মার্কেটে ভিড় করছে।

ক্রেতারা নিজেদের সাধ্যমতো মানুষ প্রিয়জনদের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। এসব মার্কেটের ভেতরে ও আশেপাশের রাস্তাগুলোতে হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। সবখানেই ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা বাহারি রঙের সব পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন। কেউ পোশাক শরীরে ট্রায়াল দিচ্ছেন। কেউবা বাচ্চাদের পোশাক কেনায় ব্যস্ত। কেউবা শাড়ি, কসমেটিকস, গহনা, জুতার দোকানে ভিড় জমিয়েছেন। ছেলেদের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। তবে থেমে নেই, সবাই ছুটছেন পছন্দের পোশাকের সন্ধানে। ভিড়ের কারণে ক্রেতার সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। এর মধ্যেই পছন্দের কাপড় কিনছেন ক্রেতারা। ছেলেরা বেশি কিনছেন শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। আর তরুণী ও নারীরা কিনছেন শাড়ি, থ্রি-পিস ও ফ্রক। এছাড়া জুতার দোকানেও বিক্রি বেড়েছে অনেক।

রাঙামাটির বৃহত্তর বনরূপা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. আবু সৈয়দ গণমাধ্যম'কে জানান, মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা যাতে সুলভমূল্যে তাদের পছন্দ জিনিস কিনতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সাথে মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোড়দার করা হয়েছে। পাশাপাশি জাল নোট পরীাকরণ মেশিন বসানো হয়েছে। যাতে গ্রাহকরা কোন রকম হয়রানির শিকার না হয়।

এদিকে কাপ্তাই নতুন বাজার কাল্পনিক ফ্যাশন হাউস বিশিষ্ট কাপর ব্যবসায়ী মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, ঈদের দিন যতোই কাছে আসবে বেচাকেনা ততোই বাড়বে। পোশাক পরিচ্ছদের পাশাপাশি কসমেটিকস, আতর, টুপি, দর্জি, জুতা, হাড়ি-পাতিল, দোকানেও ক্রেতার ভিড় লক্ষ করার মতো। এই বাজারের প্রায় শতাধিক কাপড়ের দোকানে সব বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে।

তিনি আরো জানান, দুই বছর বেচা-কিনা করতে পারি নাই করোনা কারনে এবারে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

মিতা ফ্যাশন মোঃ বেলা উদ্দিন বলেন, বেচা-কেনা খুব ভালো হচ্ছে গত বারের ক্ষতি পূরণ হবে আশাকরি।

অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে রাঙামাটি জেলার আইন-শৃঙ্খলা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে। তাছাড়া ঈদের মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। যাতায়াত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

(আরএম/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২২)