তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল ফের স্থগিত করা হয়েছে। চলতি মাসের ৮ তারিখের নির্ধারিত কাউন্সিল ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড থেকে স্থগিতের বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  প্রায় ১ যুগ পর আয়োজিত সম্মেলন মাত্র কয়েক দিন আগে স্থগিতের খবরে পদ প্রত্যাশীরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কাউন্সিল স্থগিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীদের অনেকে। দলের সিনিয়র নেতারাও বিস্মিত হয়েছেন। তাদের ভাষায়, ‘গড়তে গিয়ে নবীগঞ্জ বিএনপি এখন ভাঙার উপক্রম। তবে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই।  

জানা যায়, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনে মনোনয়ন পান গণফোরামের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, মনোনয়ন বঞ্চিত হন তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া। এতে ক্ষোদ্ধ হয়ে তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে আবস্থান নেন গুঞ্জন ওঠে। বিষয়টি দলীয় ফোরামে খোলাসা হলে কয়েকমাস পরই নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, সরফরাজ চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু-কে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। এরপর থেকে দলীয় নেতা কর্মীরা তাকে বয়কট করতে শুরু করলে কোনঠাসা হয়ে দীর্ঘ ২ বছরেও বেশি সময় লন্ডনে আবস্থান করেন তিনি।

বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশক্রমে গেল বছর, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা বিএনপি, এরপর নির্বাচন কমিশন গঠন করে তফসিল ঘোষণা হলে, সভাপতি পদে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক ২ বারের সভাপতি ও সাবেক ইউ/পি চেয়ারম্যান সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা। তৎকালীন সময় শেখ সুজাত মিয়া লন্ডনে অবস্থান করায় তার তার পক্ষ তার অনুসারীরা মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলের তফসিল ঘোষণার পর, কাউন্সিলে সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা মিয়ার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হতে পারেন এমন আশংকায় কাউন্সিল স্থগীত করতে কেন্দ্র দৌড়যাপ, লবিং, তদবীর শুরু করেলে এক পর্যায়ে দলের হাই কমান্ড কাউন্সিল স্থগীত ঘোষণা করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৩০ মার্চ কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হলেও রহস্যজনক কারনে ফের নির্বাচন স্থগীত হয়।

সর্বশেষ, পুনঃ তফসিলে ৮ মে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা হলে প্রার্থীরা পবিত্র রমজান মাসেও নির্ঘুম প্রচারণা করেন কিন্ত, আবারও কাউন্সিল স্থগিত হওয়ায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থক এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হতাশ হয়ে পড়ছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, সাবেক এম,পি শেখ সুজাত বেশিরভাগ সময় লন্ডনে থাকেন তিনি দীর্ঘদিন যাবত রাজপথে নেই, নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে এমন আশংকায় ষড়যন্ত্র করে কাউন্সিল বানচাল করে টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়যাপ করছেন, যা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ও হতাশা ক্ষুব্ধ করছে। তবে, ক্ষুব্ধ হলেও কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে নারাজ।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপাপ্ত নেতা, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জাহিদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে সারা দেশে কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পর্ণগঠন কার্যক্রম চলছে কোন উপজেলায় পকেট কমিটি গঠনের প্রশ্নই উঠে না। সারা দেশের ন্যায় শ্রঘ্রই, নবীগঞ্জেও কাউন্সিলের মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।

(টিএইচ/এসপি/মে ০৮, ২০২২)