শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ফিলিং স্টেশন বা পাম্পগুলোতে অকটেন পাওয়া গেলেও পেট্রলের চরম সংকট । এতে করে বিপাকে পড়েছেন, ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক ও মোটরসাইকেল আরোহীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপোতে পেট্রলের দৈনিক চাহিদা ১ লাখ ৮০ হাজার লিটার। এ ডিপো থেকে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধাসহ ৪১০টি পেট্রল পাম্পে পেট্রল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

পার্বতীপুর ডিপোর ইনচার্জ এমরানুল হাসান এই প্রতিবেদক শাহ্ আলম শাহীকে জানান,, 'ডিপোতে গত ১ সপ্তাহ ধরে কোনো পেট্রল নেই।' ১০ দিন আগে প্রায় ৩ লাখ লিটার পেট্রল আসে এই ডিপোতে। সপ্তাহখানেক ধরে মৌলভীবাজারের রশিদপুর গ্যাসফিল্ড থেকে হঠাৎ করে পেট্রল আসা কমে যাওয়ায় ডিপোতে পেট্রল সংকট দেখা দিয়েছে। পেট্রল নিতে আসা ট্যাংকলরিগুলো টার্মিনালে ৪/৫ দিন অপেক্ষা করেও পেট্রল পাচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে পেট্রল সংকট চরম আকার নিয়েছে দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের আট জেলায়। ইতিমধ্যে অনেকে পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখেছেন। দ্রুতই পেট্রলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি তেল পাম্পের কয়েকজন মালিক বলেন, ‘চাহিদামতো তেল দিতে পারছে না পার্বতীপুর ডিপো।

পেট্রল সংকটের বিষয়ে একইরকম তথ্য দেন দিনাজপুর সহ এর আশপাশের জেলার আরও কয়েকটি তেল পাম্পের মালিক ও কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেলা পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাবিবুর রহমান শাহীন জানান, পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপোতে প্রায় ১৫ দিন ধরে পেট্রলের সংকট চলছে। আমরা চাহিদার ৪ ভাগের মাত্র ১ ভাগ পেট্রল সরবরাহ পাচ্ছি। পার্বতীপুর তেল ডিপোতে জ্বালানি তেল পেট্রল সংকটের বিষয়টি আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী এবং সচিবকে জানিয়েছি।’

তবে বিপিসির আওতাধীন জ্বালানি তেল সরবরাহের তিন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের পার্বতীপুর রেলওয়ে অয়েল হেড ডিপোর ইনচার্জ এমরানুল হাসানের দাবি, তেলে সংকট দু'এক দিনেই কেটে যাবে।

পেট্রল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার কাজী মো. রবিউল আলম বলেন, ‘বর্তমানে গ্যাসফিল্ড থেকে যে পরিমাণ পেট্রল আসছে তাই আমরা ডিলার ও এজেন্টদের সরবরাহ করছি। আজ-কালের মধ্যেই পার্বতীপুর ডিপোতে প্রায় ৩ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রল) এসে পৌঁছাবে। বর্তমানে তিন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় প্রায় ৬০ লাখ লিটার ডিজেল এবং সাড়ে ৪ লাখ লিটার অকটেন মজুদ রয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় বর্তমানে ১৩৬টি ফিলিং স্টেশন আছে। এর সবগুলোতেই জ্বালানি তেল সরবরাহ আসে পার্বতীপুর ডিপো থেকে। কিন্তু পার্বতীপুর ডিপোতে মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় তেল সংকটে পড়েছে পাম্পগুলো।

দিনাজপুরের কয়েকটি পাম্প ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ পাম্পে 'এখানে পেট্রল ও অকটেন নেই' সম্বলিত বোর্ড টানিয়ে রাখা। এর কয়েকটিতে ডিজেল মিললেও পেট্রল ও অকটেনের ফুয়েল মেশিনগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে।

চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকদের জ্বালানি তেল দিতে পারছে না পেট্রোল পাম্পগুলো। পাম্প কর্তৃপক্ষের দাবি, জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ডিপোগুলো। ফলে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেকগুলো পেট্রোল পাম্প। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি ভুক্তোভোগীদের।

এনিয়ে যানবাহন চালকরা বলছেন, জেলায় দু’একটি পাম্পে পেট্রোল-অকটেন পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। অভিযোগ উঠেছে, সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খোলা বাজারে প্রতি লিটার পেট্রোল ২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে দেড়শ টাকায়।

(এস/এসপি/মে ০৮, ২০২২)