সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : তরুণরাই দেশ, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র, জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতির মূল চালিকাশক্তি হলো তরুণরাই। তরুণ প্রজন্মই আমাদের দেশ ও জাতিকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে টেনে নেয়ার বিরাট ভূমিকা রাখে এবং রেখে আসছে যুগে যুগে। তবে এই তরুণ ও যুব সমাজের একাংশ নানাভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে মরণ নেশা মাদকের সঙ্গে।

“মাদক” এক অভিশাপের নাম, এক সর্বনাশা ছোবলের নাম “মাদক”। এটি এমন একটি সামাজিক সমস্যা, যা শুধু অপরাধের জন্ম ও বিকাশ সাধন করে তা-ই নয়, বরং এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এটা এমনই এক বিষ, যা ধীরে ধীরে বিবর্ণ করে দিচ্ছে আমাদের সবুজ তারুণ্যকে। নষ্ট করে দিচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎকেও।

এ দেশে রয়েছে পর্যাপ্ত তারুণ্যনির্ভর জনশক্তি। দেশের এ মূল্যবান সম্পদ মাদকের চোরাচালান ও অপব্যবহারের কবলে পড়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দেশের অর্থনীতিও হচ্ছে বিপর্যস্ত, উন্নয়ন কর্মকা- হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। নেশার ছোবলে পড়ে যুব ও তরুন সমাজ কর্মশক্তি, সেবার মনোভাব ও সৃজনশীলতা হারিয়ে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করছে তিলে তিলে।

মাদকের এ বিষাক্ত ছোবল থেকে বাঁচতে চায় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের নিরীহ মানুষ। কিছু পেশাদার মাদক কারবারির হাতে এলাকার যুবক ও কিশোররা দিন দিন ধ্বংসের দিকে দাবিত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।

তারা অভিযোগ করে বলেন, তারাকান্দি গ্রামের স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামির মিয়ার পুত্র পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী বকুল (২৫) ও ভাতিজা রবিউল্লাহ ওরুফে রবিউল (২৪) সহ একই গ্রামের মৃত মহর উদ্দিনের পুত্র পীর ইসলাম (২৭), মুক্তার উদ্দিনের পুত্র কবির (২৬), আলা উদ্দিনের পুত্র মাসুম (৩০), সাহাব উদ্দিনের পুত্র দুলাল, রেনু মিয়ার পুত্র বছির উদ্দিন (৩৫), আসাদ মিয়ার ছেলে মাফুজ (২৬), আসাদ মিয়া (৫৫) ও ইউসুফ মিয়া ওরুফে ইসু (৫০) তারাকান্দি সোহেল মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন চাতলার বিলের ব্রীজের নীচে ব্রীজের পার্শ্বে এবং আসাদ, রুবেল, জসিম ও সাকিলসহ আরো অনেকেই তারাকান্দি দাগো শাহ মাজার ও ব্রীজ সংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম পার্শ্বে পরিত্যাক্ত মুরগির ফার্মের দক্ষিণ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মাদক বিক্রয় ও সেবন করে আসছে।

এছাড়া ওই দুটি স্থানে জুয়ার আড্ডা দিয়ে হাজার হাজার টাকার জুয়া খেলা খেলছে বলে জানান এলাকাবাসী। ওইসব স্থানে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি ও সেবনকারিকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে বলেও জানান তারা।

১০ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে চাতলার বিলের ব্রীজের নীচ থেকে জুয়া খেলা অবস্থায় তারাকান্দি গ্রামের সালাহ উদ্দিনের পুত্র মো. মাইন উদ্দিন (২৭), আমির উদ্দিনের পুত্র জুনাইদ (২০), সবুজ মিয়ার পুত্র রায়হান (২৪), সালাহ উদ্দিনের পুত্র আইন উদ্দিন (২২) ও মৃত আব্দুর রাশিদের পুত্র নাঈম (২০) কে আটক করে। অভিযান পরিচালনার সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বেশ কয়েকজন জুয়ারী দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে ৫ জুয়ারী পানিতে পড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এর আগেও ওই দুটি স্থানে পুলিশ একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও থামছেনা মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও জুয়া খেলা। এখানে পাহারা বসিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়াড়িরা এসে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে। মাদক ক্রয় ও সেবন করতেও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভীর করে আসছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই তারা এ স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র অবস্থান করছে। সন্ধ্যার পর পরই এখানে মাদক ও জুয়ার আড্ডা বসছে।

তারা আরো বলেন, আমরা মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে আমাদের কোমলমতি শিশুসহ যুবসমাজকে বাঁচাতে চাই। এর প্রতিকারের জন্য স্থানীয় মসজিদে শুক্রবার জুমার দিন বয়ান করে এলাকাবাসীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন মসজিদের ইমাম সাহেব।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই এলাকায় পুলিশ একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়ারীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই তারা গা ঢাকা দেয়। তবে স্থানীয়রা তৎপর ও সচেতন হলেই এদুটি স্থানসহ এ এলাকা থেকে মাদক ও জুয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে।

(এস/এসপি/মে ১১, ২০২২)