জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিভিন্নস্থানে ধসে পড়েছে। উপজেলার চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে নতুন দুই সেতুর সাথে লাগানো সংযোগ সড়কের দু’পাশের অংশে এমন দশার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দিকেই আঙুল তুলছে সংশ্লিষ্টরা। সামান্য বৃষ্টি আর অল্প দিনেই ধসে যাওয়ায় হতবাক এলাকায় মানুষ।

সরেজমিনে জানা যায়, বৃহৎ এ প্রকল্পে উপজেলার মইজ্জ্যারটেক (বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) চত্বর থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট ফেরিঘাট সড়ক-বিএফডিসি সড়ক-আরবান আলী সড়ক পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ প্রশস্ত করা হয়। এ সড়কে থাকা দুটি পাকিস্থান আমলের পুরাতন সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৩২-৩৬ মিটার, প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার করা হয়েছে । সড়কের প্রশস্ত ১৮ হতে ২৪ ফুটে উন্নতিকরণ করা হয়েছে।

এ সড়কের প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। বলা যায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। যে প্রকল্পের কাজের সময়সীমা ছিল গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জয়েন বেঞ্চে এ প্রকল্পের কাজ করেছেন তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান-রানা বির্ল্ডাস প্রাইভেট লিঃ, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিঃ ও সালেহ আহমেদ জে.বি।

পরে ২০২২ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করেন। ওই সময় সড়কে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলে কয়েক দফা কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় জনতা। পরে জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে স্থানীয়দের সাথে সমঝোতা করে কাজ করেন প্রতিষ্ঠানটি। স্থানীয়দের কথা তোয়াক্কা না করেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শেষ করেন প্রতিষ্ঠানটি। পাকাকরণের কয়েক মাস যেতেই সড়কের দু’পাশের বিভিন্নস্থানে ধস দেখা দিয়েছে। যা স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এমন কি দিন যাচ্ছে আর ক্রমেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের তীব্রতা দৃশ্যমান হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ নাঈম, নেজাম উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম পাভেল অভিযোগ করে জানান, ‘এই সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদার খরচ কমাতে মাটির পরিবর্তে ট্যাফে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালি ব্যবহার করেছেন। রাস্তার সোল্ডারের জন্য ৩ ফিট মাটি ধরা থাকলেও একফিট সোল্ডারও করা হয়নি। সাফবেইস, ম্যাকাডামেও নি¤œমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সড়কে বালু ভরাটের সঙ্গে সঙ্গেই পাকাকরণের কাজ চালিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রোলার দিয়ে ভালোভাবে পিটানো হয়নি সড়কটি। ঝূকিপূর্ণ জায়গায় শক্ত গাইডওয়াল দেয়া হয়নি। এছাড়া কনফেকশনও ভালভাবে করেনি। তাই বালি মাটি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে গেছে।’

চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান তালুকদার বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরাতন সেতুটি ভেঙে ফেলতে চেয়েছিলেন। আমি এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য ভাঙতে দিইনি। বরং সংস্কার করে পাকা সড়ক তৈরি করে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই কয়েক জায়গায় ধসে গেছে বলে খবর পাচ্ছি। বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়ে নতুন করে মাটি ফেলে ঠিক করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘সড়ক ধসে পড়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা সড়কটি পরিদর্শন করব। অভিযোগের সত্যতা পেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(জেজে/এসপি/মে ১২, ২০২২)