স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম : বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪ এর খসড়ায় বিয়ের বয়স কমানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে নারী যোগাযোগ কেন্দ্র চট্টগ্রাম মহানগর এর পক্ষে মাননীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি মহোদয়কে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব আবুল হোসেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, খসড়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪ প্রণয়নের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। খসড়া এ আইনে বাল্যবিবাহের অপরাধের জন্য সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা ৫০ হাজার টাকা যা বর্তমানে তিন মাস কারাদণ্ড ও জরিমানা এক হাজার টাকার বিধান রয়েছে। বাল্যবিবাহ পরিচালনাকারী এবং বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত সকলেই এই দণ্ডের আওতায় পড়বেন। বয়সের ক্ষেত্রে মিথ্যা সনদ প্রমাণিত হলে মিথ্যা সনদ প্রদানকারীর দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে। বাল্যবিবাহ আয়োজনে সহায়তাকারী বিবাহ রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন বাতিল করা হবে এবং তাকেও একই রকম সাজা ও জরিমানা করা হবে।

কিন্তু নারী যোগাযোগ কেন্দ্র গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে, এ খসড়া আইন মন্ত্রীপরিষদে আলোচনার সময় বিবাহের বয়স ছেলেদের ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ এবং মেয়েদের ১৮ থেকে ১৬ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার ও শিশু অধিকার সুরক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিপন্থী। তাছাড়া এটি বাংলাদেশ সরকারের অনুস্বাক্ষরকৃত আন্তর্জাতিক সনদসমূহ এবং শিশু অধিকার সুরক্ষা সংশ্লিষ্ট জাতীয় আইনেরও পরিপন্থী।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, বাল্যবিবাহ মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। সংস্থাটি আরো বলছে, অল্প বয়সে সন্তান ধারণ এখনও অধিকহারে শিশু ও মাতৃমৃত্যু এবং দারিদ্র ও অস্বাস্থ্যের দুষ্টচক্রের অন্যতম কারণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১১ সালে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সাথে যৌথভাবে প্রকাশিত অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও এ সংক্রান্ত প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কমাতে ১৮ বছরের আগে বিবাহ এবং ২০ বছরের পূর্বে সন্তান ধারণ না করার সুপারিশ করেছে। এর আরেক নেতিবাচক দিক হলো অল্প বয়সে বিবাহ হলে কন্যাশিশুর উচ্চশিক্ষার সম্ভাবনা থমকে যায়, কারণ বিবাহিত জীবনের নানা ধরনের দায়িত্বের কারণে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। বাল্যবিবাহ শিশুর অধিকার সুরক্ষার পরিপন্থী ও পরিণামে তারা দেশের আর্থ-সামাজিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতার অন্যতম কারণ বাল্যবিবাহ। তাই বিবাহের বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে না বরং তা উল্টো নারীর দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি করবে। নারীর উপর সহিংসতা আরো প্রকট হবে এবং পুরুষের ক্ষেত্রেও বাল্যবিবাহ এক অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হিসেবেই প্রমাণিত হবে। আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উক্ত বয়সে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়ই বেকার থাকে ফলে তারা অভিভাবকের আয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

উপরোক্ত বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে নারী যোগাযোগ কেন্দ্র-এর পক্ষ থেকে খসড়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪ এ নারী ও পুরুষের বিবাহের বয়স কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা থেকে সরকার সরে এসে এবং আইনটি পাশ ও তা যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে দেশ মুক্ত করার দাবি জানানো হয়। স্মাারকলিপি প্রদানের সময় সংগঠনের পক্ষে আবিদা আজাদ, আরজু শাহাবুদ্দিন, ফারহানা আকতার, সালমা জাহান মিলি, অ্যাডভোকেট নুরুজ্জাহান ও নাদিরা সুলতানা হেলেন।


(এএস/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪)