পীযূষ সিকদার


আমরা ভালোবাসতেই জানি না। কী দেশ কী মানুষ কী প্রকৃতি। দেশে কোনকিছুর অভাব না থাকলেও ভালোবাসার অভাব রয়েছে। দেশকে পাল্টাতে ভালোবাসার বেশ প্রয়োজন। আমরা মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরি সত্যকে জানাই বিদায়। এ কেমনতর সমাজ! চারিদিকে মিথ্যার উৎসব চলছে। সত্যকে আমরা ফেলে দিই নর্দমায়! সত্য তবু ফিরে ফিরে আসে! সত্যকে আবার ফিরে যেতে হয়! কষ্ট হয় তখন যখন সারা দেশে চলে মিথ্যার কারবারী! 

প্রকৃতির বিচার সাংঘাতিক। যে তোমার বন্দনা করে তাকে তুমি ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দাও! অন্ধকার মনে হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে এই তো আলো!

এ দেশটা আমার। যে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছে সবাইকে। সেই তো ভালোবাসতে পারে দেশটাকে। একমাত্র মা জানেন একটি সন্তান আলোর মুখ দেখতে কত কষ্ট পোহাতে হয়! আমরা বুঝি না। কেবল আমার আমার করে দিন যায়। একবারও ভাবে না টাকা, বাড়ি, গাড়ী-এ তোমার নয়! চেয়ে দেখো তোমার চিন্তার বলি রেখায় গাঙ হয়ে যায়!

আমরা কাউকে আপন করতে পারি না। বড় পরিসরে বলতে গেলে দেশটাকেও ভালোবাসতে পারি না! হায়রে দেশ! তোমাকে নিয়ে স্বপ দেখি পিতা ফিরে আসবেন! আসে না! আমার কাছে একটি নীল লুঙি প্রতীকী হয়ে রয়! গহীনে ডুব দেই! আমরা যদি তোমার কথা না বলি! তুমি অন্ধকার ছাড়া আর কিছু নও! হে দেশ, তুমি তখন শূন্যগহবর ছাড়া আর কিছু নও।

হে দেশ, তোমার জন্য যে কলম হাতে নেয়। সংশপ্তক লড়াই করে বাঁচে! তাঁর কথা কী একবার স্মরণে এলো না!
আমরা দুপা ছাড়াই লড়াই করে যাবো! সত্যের জন্য একটু ভালোবাসার জন্য। এও স্বর্তব্য যে লড়াইতে হারও নেই জিৎও নেই। তবু লড়াই সত্যের জন্য লড়াই করে যাবে।

হে দেশ, নাই বা তাকালে আমাদের দিকে! তবে লড়াই আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। হে দেশ, কীবা চাইবার আছে তোমার কাছে! হাইব্রিডে ভরে গেছে দেশ! হে দেশ, তুমি ভালো থেকো। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধে সব হারিয়ে সর্রহারা, হে দেশ, আমরা যে মহান মুক্তিযুদ্ধে সব হারিয়ে তোমার কথাই বলি!

কার যেনো একটা লেখা পড়েছিলাম! সত্যিবাদীরা সব সময় ঘৃনিত হয়! ঘৃনিত হতে হতে নিশ্চিত জানি এক সময় ঠিকই সত্যের কাছে যাবো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর বাণী ‘‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালাবাসিলাম, সে কখনো করেনা বঞ্চনা আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন, মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।’’

হে দেশ, এই কী তোমার সুবিচার! নাকি যারা দেশকে ভালোবাসে তার থেকে তুমি মুখ ঘুরিয়ে নাও! এমন কিইবা চাবার আছে তোমার কাছে! মনে মনে ভাবে অমৃত- এ দেশকে তবে ভুল হলো! নাকি আমাদের কোন দেশ নাই! থাকার কথা নয়!

হে দেশ, এক লহমায় পাঠিয়ে দাও অট্রেলিয়ায় অথবা সিন্ধুপারে! ঝোপঝাপ কেটে ফসল ফলাই। হে দেশ, তুমি বোঝ না বোঝ দেশটা আমাদের। বাংলাদেশটাকে কত ভালোবাসি! আমাদের অধিকার আছে রাজাকারদের বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যাবার! হে দেশ তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে সব হারালাম! এই বেদনাটুকু আর কেউ না বুঝলেও তোমার বোঝার উচিৎ ছিলো! চেয়ে দেখো, হে দেশ, একবার চেয়ে দেখো প্রমিথিউস আলোর মিছিলে চলেছে একা। মনে গুনগুন করে কথা হয়ে বাজে, সে যে ভেতরের অনুভূতির এক দুই তিন। আমরা যদি না বদলাই তাহলে অন্যেরা বদলাবে কেমনে! এ সত্য না মেনে আমরা শুধু কথার পীঠে কথা সাজাই।

হে দেশ, আমি দীন হীন তোমকে কিছু বলবার মতো সাহস নেই! তবু সাহসে পায়ে ভর দিয়ে তোমাকে কিছু বলি-দিন ভাসিয়ে সমুদ্রে! মানচিত্র বরাবর। হে দেশ, ডুবি অথবা মরি! আপনাকে দোষ দেবো না। হে দেশ, তুমি কি জানো? আমরা ৭১-এ সব হারিয়ে সর্বহারা! কী দেখেন? আশা! আশা! আশা! স্বপ্ন জাগানিয়া! নৈরাশ্যে ডুবে আছি আমরা!
হে দেশ, তোমার জন্য ভালো কোন ডিগ্রি নিতে পারিনি! নিরাশার রাজ্যে আমরা স্বপ্নপথিক! স্বপ্ন বপে চলি নিরন্তর।

লেখক : নাট্যকার ও শিক্ষক।