এসকে সুলতান, আশুলিয়া : বেহাল দশায় কাঁটছে ১২ টি বছর! নানা ভোগান্তি-অভিযোগ জানিয়েও মিলেনি প্রতিকার। অভিমানে আর চাপা ক্ষোভে হতভাগ্য মানুষের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিদিন। তবে আশার কথা, টেন্ডার পাস হয়ে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। কাজ শুরু হবে আগামী মাসে। তবে দীর্ঘ এতো বছরে কেন হয়নি কাজ? সংস্কার হলেও কেনইবা টিকেনি সড়ক।

শনিবার (১৪ মে) সকাল থেকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিল্পনগর আশুলিয়ার ভাদাই সড়ক প্রায় ২০ ফুট প্রস্থ। প্রায় সড়কের পানি জমে আছে। খান্দাখন্দ-ভাঙ্গাচুড়া দুর্ভোগের এক জনপথ। রিকশা বা মোটরসাইকেলেও যাতায়েত করলেও ময়লা পানি শরীরে ছিটকে পড়ছে। অনেকে পায়ে হেঁটে চরম দুর্ভোগ নিয়ে গন্তব্য যাচ্ছেন। আবার বাবা ভিজে শিশু শিক্ষার্থীকে মেয়েকে কোলে নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। এখানে প্রায় লাখো মানুষের বসবাস। নিম্ম আয়ের পোশাক শ্রমিকই বেশি। এমন বেহাল দশার এক যুগ হলেও উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না খেটে লাখো মানুষগুলো। অোশে পাশে দোকানগুলোতে বিক্রি নেই। তাদের সবার প্রশ্ন কেন সড়কটির কাজ হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা সড়কটির এমন বেহাল দশায় ক্ষোভ আর আপেক্ষ জানাতে ভুলে গেছে। মরা উপর খড়ার ঘা বর্ষাকাল। ময়লা পানিই যেন এখন তাদের অপ্রিয় আপজন।

কত দিন যাবৎ রাস্তার এই অবস্থা? রাস্তার পাসে এক দোকানীকে জিজ্ঞেস করতেই রেগেমেগে বলল,"আমাগো জিগান ক্যান, মেম্বার চেয়ারম্যান গো জিগান গা"। দিনের পর দিন বছরের পর বছর রাস্তার এমন বেহাল দশার কোন প্রতিকার না পেয়ে ক্লান্ত বিরক্ত মানুষগুলো এ ব্যপারে হাল ছেড়ে দিয়েছে। রেগে যাচ্ছেন কেন? এমন জবাবে তিনি আরো বলেন, কতজনই আসে জানতে চায়। এক যুগ হলেও কোন সমাধান তোন নেই।

অপর এক পথযাত্রী আবুল কাশেম আক্ষেপ নিয়ে বলেন,"কি আর বলব ভাই, কাকেই বা বলব, পাঁচ ছয় বছর ধরে রাস্তাটির এমন দশা।এ তা দেখার কেউ নাই, রপ্তানিতে চাকরী করি প্রতি দিন প্রায় এ রাস্তা দিয়ে চলতে হয়। এ রাস্তায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাস্তাটি চওড়া করা না গেলেও পিচ ডালাই করে যদি ঠিক কটা হত,তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম।

স্থানীয় বাসিন্ধা সাগর আহমেদ বলেন, সড়কটি এরআগে কাজ করা হয়েছে। তবে আমাদের এলাকার প্রধান সমস্যা হলো নিষ্কাষন। পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকায় বার বার সড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় এক যুক ধরে এমন ভোগান্তির মধ্যে আমরা চলাচল করছি। তবে শুনেছি

সাভার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ডিইপিজে-ভাদাইল সড়কটি প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ। দুই বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ভাদাইল মোড় থেকে পাবনার টেকের অংশ কাজ করেছে। তবে পরে অংশ ভাদাইল মোড় থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মুখ পর্যন্ত কাজটি বাকী ছিলো। বাকী অংশটুকু দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। ধামসোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের আবেদনের ভিত্তিতে সড়কের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ড্রেন লাইন নির্মান করবেন। ইতিমধ্যে এলজিইডি থেকে টেন্ডার হয়েছে ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এমাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের (জুন) শুরুর দিকে সড়কটির কাজ শুরু হবে। প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্ধে সড়কটি করা হচ্ছে।

ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায, সড়কটিতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব শেষে দুই বছর আগে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংষ্কার কাজ করা হয়েছিলো। বাজেট স্বল্পতার কারনে এতো বড় সড়কের কাজ করা পরিষদের জন্য সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সড়কটিতে সংষ্কার কাজ করা হয়। মুলত এই এলাকাটিতে আবাসিক এলাকার পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা না থাকা সড়কে পানি জমে থাকে। বার বার সংস্কার করলেও পানি জমে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। তবে এলজিইডিতে সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করবেন। ড্রানেজ ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধ থেকে করা হবে।

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সালেহ হাসান প্রামানিক বলেন, সড়কটি এলজিইডির অধীনে। দুই বছর আগে সড়কটির একটি অংশে কাজ করা হয়েছে। মাঝখানে করোনার দুইবছর কোন ধরনের প্রকল্প পাস হয়নি। প্রস্তবনা আগেই দেয়া ছিলো। তবে এখন মহাসড়ক থেকে ভাদাইল মোড় পযন্ত ১ হাজার ২০০ মিটার আরসিসি সড়ক করা হবে। টেন্ডার পাস হয়ে ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার (১০ মে) ওয়ার্ক অর্ডার হাতে পেয়েছি। আমরা দ্রুতই ঠিকাদারকে সড়ক বুঝিয়ে দিবো। আশা করি এ মাসের শেষের দিকে বা জুন মাসের শুরুতেই কাজ শুরু হবে। তবে কেন দীর্ঘ এতো বছর কাজ হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমি আড়াই বছর হয়েছে সাভারে যোগদান করেছি। ফলে এরআগে কেন হয়নি। তা বলা মুসকিল।

(এসকেএস/এসপি/মে ১৫, ২০২২)