স্টাফ রিপোর্টার : মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের দাবিকে অবাস্তব উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, এ দাবির সঙ্গে বাস্তবতার আদৌ মিল নেই। এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয়। মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়াও অস্বাভাবিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোমবার (১৬ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি কথা বলেন। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন সিপিডির আরেক ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিবেশ, জলবায়ু ও সবুজ অর্থনীতি বিভাগের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকার মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ওপরে বলে থাকে, প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে এর আদৌ মিল নেই। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। ভোজ্যতেল ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের ওপরে। আটা-ময়দার মতো পণ্যের দামও ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। মোটা চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু মাঝারি বা সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেড়েছে। সার্বিকভাবে তেল, ডাল, ডিম, মুরগি ও মাছসহ ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ার যে হার দিচ্ছে টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ), তা বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) দেওয়া তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও মেলে না। বিবিএস মুদ্রাস্ফীতির যে তথ্য দিচ্ছেন, তা বাস্তবসম্মত নয়, এমনকি বিজ্ঞানসম্মতও নয়।’

‘আমাদের ধারণা, মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আগামী দিনে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববাজারে যে পণ্যের দাম বেড়েছে, সেই পণ্য এখনো দেশের বাজারে আসেনি। সেগুলো যখন আসবে, তখন নিত্যপণ্যের দাম আরেকদফা বাড়বে।’

একদিকে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে— অপরদিকে টাকার দাম কমছে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কোনো অর্থনীতির ভেতরে সুদের হার, বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। একদিকে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, আবার অপরদিকে টাকার মান অবনমন হচ্ছে। যে প্রত্যাশায় সুদের হার কম রাখা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগ কত কয়েক বছরের বেড়েছে, এমন কোনো তথ্য নেই। সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে— এমন সূত্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন টাকার আমানতে গড় সুদের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতি বছর প্রকৃত মূল্য দুই শতাংশ করে কমে যাবে। এটা বড় ধরনের সঞ্চয়বিরোধী। আগামীতে টাকার মান অবশ্যই নিম্নমুখী হবে। অবশ্যই সুদের হার বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিকে ধরে রাখতে হলে, মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, তাদের আয় পণ্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে না।’

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই কমার ধারা শুরু হয়েছে। আমাদের বর্তমানে যে মজুত আছে, তা দিয়ে ৪ থেকে ৫ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।’

বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে দেশের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের টান পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজার স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ছাড়ার সক্ষমতা থাকছে না। এর ফলে টাকার পতনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে টাকা ও ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের পার্থক্য হয়ে গেছে।’

(ওএস/এসপি/মে ১৬, ২০২২)