স্টাফ রিপোর্টার : প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) গ্রেফতারের খবরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড শেয়ারবাজারে বড় ধরনের চমক দেখিয়েছে। সার্বিক শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হলেও এই দুটি কোম্পানির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এ দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পি কে হালদারের ব্যাপক লুটপাটের শিকার হয়েছে।

পি কে হালদার ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে শেয়ারবাজার থেকে ভিন্ন নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফাস ফাইন্যান্স ও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের শেয়ার কিনে মালিকানায় আসেন। কোম্পানি তিনটির দখল নিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালান পি কে হালদার।

এখন পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি ও আত্মসাতের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি ও পিপলস লিজিং থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। পি কে হালদারের লুটপাটের শিকার এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই আর্থিক দুরবস্থায় পতিত হয়েছে।

লোকসানে পতিত হওয়ায় কোম্পানিগুলো কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ার দামেও। শেয়ারের অস্বাভাবিক দরপতন হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে শেয়ারবাজারে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে এখনো কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ রয়েছে। ফাস ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হলেও দীর্ঘদিন ধরে দরপতনের মধ্যে পতিত হয়।

এদিকে দেশের আর্থিক খাতে লুটপাট চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আস্তানা গড়েন পি কে হালদার। নাম বদল করে ভারতে আত্মগোপনে থাকা আর্থিক কেলেঙ্কারির এই হোতাকে গত শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করে।

অবশ্য শুক্রবার সারাদিন ধরে ইডির কর্মকর্তারা পি কে হালদারসহ তার সহযোগীদের বিভিন্ন অফিসে হানা দেন এবং বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেন। বর্ধমানের কাটোয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পি কে হালদার, উত্তম মিত্র, প্রীতিশ হালদার ও প্রীতিশ হালদারের স্ত্রী এবং জামাতা সঞ্জীব হালদারকে গ্রেফতার করা হয়।

পি কে হালদার গ্রেফতার হওয়ার খবর আসার পর সোমবার (১৬ মে) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনার খোরাক হয়। লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফাস ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করলে তা বিনিয়োগকারীদের আলোচনায় আরও রসদ জোগায়।

বিনিয়োগকারীদের আলোচনার মধ্যেই লেনদেনের পুরোটা সময় দিনের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার। এতে ৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৬ টাকায় উঠে এসেছে। ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে। এর মাধ্যমে দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে এই কোম্পানিটিও।

পি কে হালদারের লুটপাটের শিকার হওয়া এই দুই কোম্পানির শেয়ার দাম এমন বাড়লেও সার্বিক শেয়ারবাজারে এদিন ব্যাপক দরপতন হয়ছে। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। বিপরীতে দাম বেড়েছে মাত্র ২৬টির। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ১৩৪ পয়েন্ট।

শেয়ারবাজারে বড় পতনের মধ্যে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে চমক দেখালোও ফাস ফ্যাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং দুই কোম্পানির আর্থিক চিত্র বেশ করুণ। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে বড় ধরনের লোকসান গুনছে ফাস ফাইন্যান্স। ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ১২ পয়সা করে মোট ১৫০ কোটি ৮৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা লোকসান করে ফাস ফাইন্যান্স। পরের বছর ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ১৪ টাকা ৬১ পয়সা করে মোট লোকসান দাঁড়ায় ২১৭ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ২০ পয়সা করে মোট লোকসান হয়েছে ১০৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংও ২০১৯ সাল থেকে লোকসানের মধ্যে পতিত হয়েছে। ২০১৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ১২৬ টাকা ৩৬ পয়সা করে মোট লোকসান দাঁড়ায় ২৮০২ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ৩১ টাকা ৩০ পয়সা করে মোট লোকসান হয় ৬৯৪ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ৭১ পয়সা করে মোট লোকসান হয়েছে ১৭১ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

(ওএস/এসপি/মে ১৬, ২০২২)