জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : ঢাকা থেকে নৌকা মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ফিরে শত শত মানুষের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজে অঝরে কাঁদলেন অপরকেও কাঁদালেন উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক।

গতকাল সন্ধ্যায় মোটর বাইক শোভাযাত্রা ও নৌকা মার্কার সমর্থকেরা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত মিছিলে তাঁদের প্রিয় নেতাকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে জুলধা ১১ নং মাতব্বর ঘাট হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরেন।

এ সময় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে নৌকার প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম হক তাঁর ১২ মিনিটের আবেগঘন বক্তব্য প্রদানকালে নিজে কাঁদলেন এবং শত শত এলাকার লোকজনকে কাঁদালেন। দেখা যায়, এ সময় সবার চোখের কোণে পানি যেন টলমল করে।

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ‘আমি আমার এলাকার হাজার হাজার মা বোনের দোয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমার নবী করিম সাঃ এর উপর দরুদ পাঠ করছি। কেননা এমন এক শক্তি কেবল আল্লাহ আর নবী ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে পারেন না। কেউ ছিল না আমার পক্ষে সে সময়। বিশ্বাস করেন আমি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে লড়াই করেছি। আমার মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয় শুধু পাশে ছিলেন। আমার প্রিয়নেত্রী শেখ হাসিনা ও সর্বশেষ এলাকার জনসাধারণের দোয়ায় আমি ঢাকা থেকে আজ নৌকা প্রতীক নিয়ে এসেছি। আমার মন্ত্রী যে কি পরিমাণ কষ্ট করেছেন তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বুঝানোর ভাষা নেই।

মুহাম্মদ সেলিম হক বলেন, ‘বিশ্বাস করেন আমি এই এলাকার সন্তান। আপনারা আরও জানেন কর্ণফুলীর চারটি ইউনিয়নের নির্বাচন শেষ হয়েছে। আপনারা খুব উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ছিলেন চরপাথরঘাটায় কে নৌকা পাচ্ছেন। আপনারা বিশ্বাস করেন আল্লাহর অসীম কুদরত যদি না থাকতো। তবে এ বিজয় অর্জন করা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব ছিল না। আপনারা দেখেছেন আমি ছোটকাল থেকেই আজকের এই জায়গায় দাঁড়িয়েই চরপাথরঘাটার উন্নয়নের কথা বলতাম। আমি চেয়েছিলাম এই সমাজকে পরিবর্তন করতে। আজও হাজির হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয় আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। সততার কারণে তিনি আমাকে এতটাই পছন্দ করেন তা ভাষায় বুঝাতে পারব না। এ জন্য সবার সাথে পরামর্শ করে তিনি আমাকে নৌকা উপহার দিয়েছেন। আমার দলের সব নেতাদের সাথে আমি যোগাযোগ করে ঢাকা গিয়েছি। সবার সাথে কথা হয়েছে। এমনকি আমি ঢাকায় যাবার আমার চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদের সাথেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ‘ভাই ঢাকায় গিয়ে দেখেন নৌকা আনতে পারেন কিনা।’ আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। আমি চাই এলাকা র উন্নয়ন করতে। দলীয় প্রতীক নয়। দল মত নির্বশেষে আমি আপনাদের সন্তান। আগন্তুক হিসেবে আমি আসিনি। আপনারা আমাকে দেখেছেন ও সামনে দেখবেন। আশাকরি ১৫ জুন নৌকার বিজয় করবেন। আপনাদের সবাইকে নিয়ে বসে মতামত গ্রহণ করে চরপাথরঘাটার উন্নয়ন করব। অতীতে কি করেছি না করেছি আপনারই জানেন।’

নৌকার প্রার্থী সেলিম হক আরোও বলেন, ‘২০১৬ সালেও আমি নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কপালে ছিল না। করতে পারিনি। আমার মা বলতেন ‘কি দরকার বাবা এসব করার। তোমার তো বড় ভাই নাই, বাপ নাই। তাই সফল হতে পারবে না।’ আমার মা যখন রাজি ছিল না। তাই নির্বাচন করার পরিকল্পনা থেকে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মায়ের মৃত্যুর ৫ দিন আগে আমার বড় বোনকে মা বলে গেছেন। আমি সেলিমকে উন্মুক্ত করে গেলাম। তাকে নির্বাচন করে তাঁর মনের আশা পূরণ করতে বলিয়েন। আজ আমার মা নেই। মাত্র ২০ দিন পরিশ্রমর করে আমার মন্ত্রী মহোদয়ের দোয়ায় এই পর্যন্ত এসেছি। যখন আমার উপর সঙ্কট শুরু হয়। তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে বারবার বলেছি। প্রথমে মক্কা শরীফ গিয়েছি। পরে মদিনা শরীফ গিয়েছি। ওখানেও কেঁদে কেঁদে বলেছি। হে আল্লাহ আপনি যদি আমাকে কবুল করেন। আমার নামটি যেন মন্ত্রী মহোদয়ের হাত দিয়ে কেন্দ্রে পাঠাবেন। আর আমাকে যদি কবুল না করেন। তাহলে আমার নামটি দিয়েন না। আমার মনে হয় মদীনা আর মক্কায় আল্লাহ আমার নামটি কবুল করেছেন। এ জন্য হয়তো আমি সমস্ত লড়াইকে অতিক্রম করে আজ এখানে এসেছি।’

যুবলীগের সম্পাদক তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, ‘২০১৮ সালের করোনার আগে আমি মদিনা শরীফে মন্ত্রী মহোদয় কে বলেছিলাম। আমি আর পারতেছি না। এ রাজনীত করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। রাসুলের রওজায় সেদিন শুক্রবার ছিল। আমাকে মন্ত্রী মহোদয় বললেন, সেলিম তুমি থাকো । তোমাকে আমি দেখব। সততার মৃত্যু নাই। হতাশ হলে চলবে না। আমার মন্ত্রীর কথা সত্যি হলো। তিনি তাঁর কথা রাখলেন। বিশ্বাস করেন আপনারা, কি পরিমাণ যে মন্ত্রী মহোদয় নৌকা কিংবা আমার জন্য কষ্ট করেছেন সেটা আমি বুঝাতে পারব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের ভাইকে বলে পুনরায় প্রার্থী পরিবর্তন করে আমাকে নৌকা উপহার দিলেন মন্ত্রী মহোদয়। আমি আল্লাহকে বার বার বলেছি। আল্লাহ আমার কোন টাকা পয়সা নাই। আমাকে কিছু মানুষ দেন। যারা আমার জন্য কথা বলবেন। আল্লাহ তা হয়তো কবুল করেছেন। আল্লাহর কসম আমার জন্য এমন মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। যে নেতা আমাকে চিনে না। আ.লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার পর্যন্ত আমার জন্য চেষ্টা করেছেন। আমি বার বার নাজিমকে বলেছি। এটা কিভাবে সম্ভব। সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় সম্ভব হয়েছে ।’

‘আজকে আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে মাত্র আমি আল্লাহর ঘর থেকে এসেছি। এই ইউনিয়নের একটা টাকাও আমি আত্মসাৎ করব না। উপরে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি। কারণ আমি আল্লাহর কাছে ওয়াদাবদ্ধ। মায়ের আদেশ ছিল না তাই ৫ টি বছর মন্ত্রীকে বলিনি। আমি নির্বাচন করব। পরে মায়ের মৃত্যুর পরে বোনের কাছ থেকে শোনে প্রথমে আল্লাহকে বলেছি। তারপর মন্ত্রীকে। এখন আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা আমাকে কথা দেন। আমি আপনাদের প্রতিদান দেব ইনশাল্লাহ। চরপাথরঘাটার চেহারা আমি পরিবর্তন করে দেব। আপনারা কথা বলার সুযোগ পান নাই। আমার সাথে আপনারা সরাসরি কথা বলতে পারবেন ।’

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি স্মরণ করে বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনিও এ রকম মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। গ্রাম থেকে ওঠে এসেছেন। স্মরণ করেছেন ১৫ আগস্টে যারা নির্মম ভাবে শহিদ হয়েছেন। সেই সাথে স্মরণ করেছেন ৩০ লক্ষ শহিদকে। যারা এদেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। বাংলাদশে তথা চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাইকেও। উনার জন্য সবাই দোয়া করবেন। যার স্বপ্ন আজকের এই কর্ণফুলী উপজেলা। শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি জাতীয় চার নেতাকে। আমি স্মরণ করছি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি করতে গিয়ে যারা শহিদ হয়েছেন।

আকস্মিক এই পথ সভায় উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ নাজিম উদ্দিন হায়দার, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ছৈয়দ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ রাজা, যুবলীগ নেতা আনোয়ার সাদত মোবারক, উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাশেদ রানা, উপ-দপ্তর সম্পাদক শাহারিয়ার মাসুদ ও কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সাজিদ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী।

(জেজে/এসপি/মে ১৬, ২০২২)