জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : নির্বাচন কেমন হবে? নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হবে তো? নাকি কারচুপির নির্বাচনে জিতে যাবে সরকারি দলীয় কোন প্রার্থী। চট্টগ্রাম জেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে এমন ভয়ে, সংশয়ে সাধারণ ভোটাররা। আগের মতো কারচুপি আর কেন্দ্র দখল-বেদখলের নির্বাচনই হবে কি না তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

আগামী ১৫ জুন ইভিএমে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে। ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে দাবি করে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোঃ সেলিম হক। তবে অন্য প্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়। ভোটের শঙ্কা রয়েছে ভোটারদের মাঝেও। শুধু স্বতন্ত্র দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী নয়, পুরো ইউনিয়নের সাধারণ পদের সদস্য ও সংরক্ষিত প্রার্থীরাও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ না হলেও চরপাথরঘাটায় নির্বাচনী প্রচারণা ও উঠোন বৈঠকে ছড়িয়েছে উত্তাপ। যদিও ফেসবুকে পোস্টার-লিফলেটের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে নির্বাচনী বৈঠকও চোখে পড়ার মতো। এবারে চরপাথরঘাটার ইউপি নির্বাচনে গতবারের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপির প্রার্থী সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম মঈন উদ্দিনও মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করেছেন। রয়েছে দুবারের চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ। একই পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মনির আহমদ মার্শাল ও (স্বতন্ত্র) সালাহ উদ্দিন আহমদ। এদের অনেকেই সংশয়ের কথা জানিয়ে ভোটের পাঁচ দিন আগে থেকে বিজিবি মোতায়নের দাবি করে আসছেন।

একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যেন না হয়। সক্রিয় কর্মীদের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করলে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হবে। এমনকি সাদা ও ইউনিফর্ম পরিহিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন বিরূপ আচরণ না করেন। তবুও ভিন্ন কিছু হলে জনগণ তা প্রতিহত করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে নৌকা বিজয়ী হোক তাতেও সমস্যা নেই। চরপাথরঘাটায় যেন কোন অনাকাংখিত ঘটনা না ঘটুক।’

মনোনয়ন নেওয়া মনির আহমদ মার্শাল বলেন, ‘এ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোনো গোলযোগ না হওয়ায় স্বস্থি প্রকাশ করছি। গতবারের নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে মারামারি ও গন্ডগোল হয়েছে। এবারও ঝুঁকি রয়েছে। তবুও একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা রাখি। নতুন কমিশনের কাছে। তবে অন্য প্রার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকলেও একেবারে নির্ভার আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ সেলিম হক।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চরপাথরঘাটার এক যুবলীগ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সরকারকে বিব্রত করার জন্য ও প্রশ্নের মুখে ফেলার জন্য কেউ যেন ভুল তথ্য না দেয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী মনির আহমদ মার্শাল আরোও তথ্য দিয়ে বলেন, ‘আজকে আমার মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা দল করি তবে অশান্তি চাই না। আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। যেকোনো মূল্যে চরপাথরঘাটার নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জনপ্রত্যাশায় ইসি সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। কেননা বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের ভিত রচনা করেছিলেন। গণতন্ত্রের মূলভিত্তি নির্বাচন। সকল নির্বাচনই যেন সুষ্ঠু হয় এই প্রত্যাশা সবার।’

চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার আমরা সবই করব। সাধারণ ভোটারকে শঙ্কায় থাকতে হবে না।’ তবুও সাধারণ ভোটারেরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে ইসি এবং সরকার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণ করুন-এটা এখন সবাই চায়। সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের শঙ্কা থেকেই যায় বারবার। তাই এ নির্বাচনটি সুষ্ঠু করে বিগত নির্বাচনের কষ্ট জনগণকে ভুলিয়ে দিক ইসি। এটাই জনগণের প্রত্যাশা।

(জেজে/এসপি/মে ১৭, ২০২২)