তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও যে গ্রামে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। নেই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিক। শুকনো মৌসুমে পা এবং বর্ষা মৌসুমে নৌকাই যাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

তেমনি একটি গ্রাম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের চিথলীয়াম গ্রাম। এই গ্রামেই প্রয়াত বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পৈতৃক ভিটা রয়েছে। এই গ্রামটিতে প্রায় ৯ শ’ মানুষের বসবাস। চিথলীয়া গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এ কারণে গ্রামের বাইরে বিভিন্ন আত্মীয়র বাড়িতে অবস্থান করে গ্রামটির শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেন। কোন মানুষ অসুস্থ হলে শুকনো মৌসুমে কাঁধে করে এবং বর্ষা মৌসুমে নৌকা যোগে হাসপাতালে নিতে হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

চিথলীয়া গ্রামের বৃদ্ধ সুকান্ত বাড়ৈ (৭৫) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এমপি। তার সুবাদে কোটালীপাড়া অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের গ্রামে এখনো কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। নাই একটি স্কুল, নাই কোন স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে প্রায় ২কিলোমিটার পায়ে হেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শিল্পী বাড়ৈ (৪৫) বলেন, আমাদের গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এ কারণে এখানে শিক্ষার হার কম। যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেন তারা সকলেই গ্রামের বাইরে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বা হোস্টেলে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার হার কম। তাই এই গ্রামে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিংসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ঘটনা ঘটে। গ্রামটির অবস্থান প্রত্যন্ত এলাকায়। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে কখনো-কখনো আইনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।

চিথলীয়া গ্রামের ইতালী প্রবাসী স্বর্ণা লতা হালদার (৩২) বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে ইটালী থাকি। গ্রামে রাস্তাঘাট সেই। তাই আমার স্বামী ও সন্তানরা দেশে আসতে চায় না। দ্রুত এলাকার রাস্তা ঘাট করার দাবি জানিয়েছেন ওই প্রবাসী নারী।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হিরা বাড়ৈ (১১) বলে, আমাদের গ্রামে কোন স্কুল নেই। তাই আমি আমার মামা বাড়ি অবস্থান করে লেখাপড়া করি। ওখানে আমার ভালো লাগে না। আমি আমার মা বাবার কাছে থেকে লেখাপড়া করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের গ্রামে একটি স্কুল করে দেন।

চিথলীয়া গ্রামের বিধান বাড়ৈ (৫৫) বলেন, বরণ্যে সঙ্গীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পৈত্রিক ভিটা আমাদের গ্রামে। তার পিতা ছিলেন ডা. ক্ষিতিশ বাড়ৈ। তাদের বাংশের লোকজন এখানে বসবাস করেন। মৃত্যুর আগে আনেকবার এন্ড্রু কিশোর অসংখ্যবার এই গ্রামের পৈতৃক ভিটায় এসেছেন। এই গ্রামে অনেক গুনী ব্যক্তির জন্ম হয়েছে। এরা সকলের অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন এলাকায় থেকে লেখাপড়া শিখেছেন। তারপরেও আমাদের এই গ্রামটি উন্নয়ন বঞ্চিত। আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানাবো আমাদের গ্রামে যেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।

কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট বিজন বিশ্বাস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে কলাবাড়ি ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চিথলীয়া গ্রামটি আমার ইউনিয়নের দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত। ২বছর আগে এই গ্রামটির মানুষদের চলাচলের জন্য একটি রাস্তা করা হয়েছিল। বন্যা ও ভারী বর্ষণে রাস্তাটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারসহ গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের চেষ্টা করবো।

(টিকেবি/এসপি/মে ১৭, ২০২২)