স্টাফ রিপোর্টার : বিশিষ্ট সাংবাদিক, গীতিকার, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীকে ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হবেন।

মরহুমের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘আমরা ওনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর অন্তিম ইচ্ছা ছিল, তাকে যেন স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, ওনার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ হোক। আমরাও সেভাবে ব্যবস্থা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রথম জানাজা শুক্রবার বাদজুমা পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার মরদেহ লন্ডনের আলতাব আলী পার্ক শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব তার পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে দেশে ফিরবেন।’

শোক প্রকাশ করে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘আমরা বরেণ্য একজন মানুষকে হারালাম। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।’

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্নেট হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়ি জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে গাফ্ফার চৌধুরী পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।

মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।

১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে লন্ডনে যান। এরপর তার প্রবাসজীবনের ইতিহাস শুরু হয়।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।

(ওএস/এএস/মে ২০, ২০২২)