শিতাংশু গুহ


একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী’র সাথে ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ নিউইয়র্ক সময় দুপুর ৩টায় কথা বলেছি। আমার স্ত্রী আলপনা সকালে জানালো যে, গতরাতে একুশের অনুষ্ঠানে সাপ্তাহিক প্রবাসীর সাবেক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানিয়েছেন যে, গাফ্ফার চৌধুরী হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছেন, এবং ডাক্তার তাঁকে ছয় মাস সময় দিয়েছেন। আলপনা’র তাগিদে কল দিলাম, কেননা ওর বাবা-কে ছয় মাস সময় দেয়ার পর ছয় সপ্তাহে সব শেষ হয়ে যায়। ভাবলাম, কখন কি হয় কে জানে, কল দেই, ছুটির দিন্, কল দিলাম। 

ধরলেন এক মহিলা, হয়তো মেয়ে, জিজ্ঞাস করিনি। বললেন, ধরুন, দিচ্ছি। খানিক বাদে গাফ্ফার ভাই ধরলেন, জিজ্ঞাসা করলেন, কে? বললাম, শিতাংশু। জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছেন? বললাম, আপনার শরীর কেমন? বললেন, এই আর কি, এখন ৮৯ বছর বয়স, চলছে আরকি! বললাম, আপনার গলার স্বর, মানে ভয়েস কিন্তু ঠিক আছে। একটু হাসলেন, তারপর বললেন, ভয়েস ঠিক আছে, তবে পা-দু’টো অচল হয়ে গেছে। বললাম, পা তো আগেও সমস্যা ছিলো। বললেন, ছিলো, তবু হাটতে পারতাম, এখন আর হাটতে পারিনা, একেবারে অচল, বিছানায়।

আমি তো অনেক কথাই বলছিলাম, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তিনি যা বলছিলেন, তা-ই উল্লেখ্য। জিজ্ঞাসা করলাম, শরীরে আর কি সমস্যা? বললেন, কিডনী দু’টোই নাই! বললাম, ডায়ালাইসিস করেন? বললেন, না, ডাক্তার বলেছেন, ডায়ালাইসিস করা যাবেনা, কিডনি ‘রিপ্লেসমেন্ট’ও করা যাবেনা। গাফফার ভাই রিপ্লেসমেন্ট শব্দটি ব্যবহার করেছেন, আমিও তা-ই করলাম। তিনি আরো বললেন, এভাবে যে ক’দিন যায়! গাফফার চৌধুরী’র কথায় হতাশা ছিলোনা, বরং বললেন, অনেকদিন তো বাচলাম।

একজন মানুষকে যখন বাঁচার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়, তখন তাঁর মনে অবস্থা হয়তো একমাত্র তিনিই জানেন। রতন বড়ুয়া’কে ডাক্তার ছয়মাস সময় বেঁধে দেয়ার পর মাস পাঁচেক তিনি সবার সাথে হেঁসেখেলে কাটিয়েছিলেন? গাফফার চৌধুরীর প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তিনি রতনদা’ থেকে বেশ বড়, তদুপরি পা-অচল। এমনিতে গাফফার ভাই’র কথাবার্তা, স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে বলেই আমার মনে হয়েছে। কথা প্রসঙ্গে ড:নুরুন নবী’র কথা এসেছে, একবার বিএনপি-জামাত তাঁকে নিউইয়র্কে সভা করতে দেয়নি, আমরা জোর করে সভা করেছিলাম তা তাঁর মনে আছে।

৬/৭ মিনিট কথা, আমার কথা শেষ হয়ে যায়? কি বলবো? বললাম, গাফফার ভাই, এরমধ্যেই ভালো থাকবেন। বললেন, তাহলে রাখি, আমার জন্যে দোয়া করবেন। বললাম, আমাদের আশীর্ব্বাদ করবেন। পাঠক, এ কথোপকথন সাথে সাথেই লিখে রেখেছিলাম, ভেবেছি হয়তো জীবনের শেষ কথা। বিখ্যাত কেউ অসুস্থ হলে মিডিয়া’র লোকজন আগেভাগে তাঁর ‘অবিচ্যুয়ারি’ লিখে রাখে। আমিও ব্যতিক্রম নই? সৈয়দ মোহাম্মদ উল্ল্যাহ’র তথ্য সঠিক হলে ‘লিজেন্ডারী গাফ্ফার চৌধুরী’ চলে যাচ্ছেন! আমার সৌভাগ্য তিনি আমায় চিনতেন। ৮৯/৯০ বছরে কেউ মারা গেলে দু:খের কিছু নেই, শুধু বলা যায়, গাফফার ভাই, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।