স্টাফ রিপোর্টার : কোভিড-১৯ পরিস্থিতি শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমেছে। সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার মূল্যমান তুলনামূলক কম হ্রাস পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে এশিয়াসহ বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে আর বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে। আর একই সময়ে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বেড়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি পরিচালিত এক গবেষণা থেকে এ তথ্য উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

রবিবার (২২ মে) বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সভায় তিনি এ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখানো হয়, কোভিড পরবর্তীকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর সবদেশেই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের মুদ্রারও মূল্যমান কিছুটা কমেছে। তবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রার মূল্যমান হ্রাসের পরিমাণ খুবই কম। নিজস্ব মুদ্রার মূল্যমান কম হ্রাস পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে কম্বোডিয়া প্রথম আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

গবেষণায় দেখানো হয়, বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান কমেছে ৩.৪১ শতাংশ, ভারতীয় রুপির কমেছে ৬.৮৩ শতাংশ, পাকিস্তানি রুপির ৩০.৬৩ শতাংশ, নেপালি রুপির ৬.৪৮ শতাংশ, মিয়ানমার কিয়াটের ১২.৬৭ শতাংশ, চীনা উয়েনের ৫.৪ শতাংশ, থাই বাথের ৯.৬৬ শতাংশ, জাপানি ইয়েনের ১৭.৩২ শতাংশ, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ানের ১২.০৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের ৩.৯ শতাংশ, ফিলিপিনো পেসোর ৯ শতাংশ, তাইওয়ান ডলারের ৬.৪ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ডলারের ৩.৭৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ান রিয়েলের শূন্য শতাংশ, ব্রুনাই ডলারের ৩.৬০ শতাংশ, লাও কিপ এর (লাওস) ৪১ শতাংশ, টার্কিশ লিরার ৮৯.৩৭ শতাংশ, মিশরীয় পাউন্ডের ১৪.৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকান রেন্ডের ১৩.৬৬ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ৯.১৭ শতাংশ, নিউজিল্যান্ড ডলারের ১০.৭৭ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ডের ১১.৮৬ শতাংশ, ইউরোর ১৩.৪০ শতাংশ, সুইস ফ্রাঙ্কের ৮.৫৫ শতাংশ, সুইডিশ ক্রোনারের ১৯.৬৭ শতাংশ, নরওয়েজিয়ান ক্রোনের ১৬.৫৪ শতাংশ, ডেনিশ ক্রোনের ১৫.৩৯ শতাংশ, পোলিশ জ্লোটির ১৮.৭৪ শতাংশ, কানাডিয়ান ডলারের ৬.৩২ শতাংশ, আর্জেন্টাইন পেসোর ১১.৫ শতাংশ আর চিলিয়ান পেসোর মূল্যমান কমেছে ১৫.৪৪ শতাংশ।

এতে আরও দেখানো হয়, ব্রাজিল এবং কয়েকটি তেল রপ্তানিকারক দেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বেড়েছে। যেসব কারেন্সির বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বেড়েছে এর মধ্যে জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ১৩.৮৬ শতাংশ, ইউরোর বিপরীতে ১০.৯৪ শতাংশ, ভারতীয় রুপির বিপরীতে ২.৭৩ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে ৮.০৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বিপরীতে ৬.৪৫ শতাংশ, চীনা উয়েনের বিপরীতে ১.৩২ শতাংশ, কানাডিয়ান ডলারের বিপরীতে ২.৯৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ানের বিপরীতে ৯.৩৮ শতাংশ, ডেনিশ ক্রোনের বিপরীতে ১১.৯৭ শতাংশ, আর্জেন্টাইন পেসোর বিপরীতে ২১.৬৯ শতাংশ, সুইস ফ্রাঙ্কের বিপরীতে ৪.৯২ শতাংশ আর নিউজিল্যান্ড ডলারের বিপরীতে বেড়েছে ৭.৪৭ শতাংশ।

গবেষণায় দেখানো হয়, ডলারের বিপরীতে মাত্র দুটি দেশ রাশিয়া ও ব্রাজিলের মুদ্রার মূল্যমান বেড়েছে। রাশিয়ান রুবলের মূল্যমান বেড়েছে ১৯.০৫ শতাংশ আর ব্রাজিলিয়ান রিয়েলের বেড়েছে ৮.৯৭ শতাংশ।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব একটা গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসময়ে বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে নানা গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে চায়। তারা দেশবিরোধী অপশক্তি। মাতৃভূমি তথা জাতীয় স্বার্থে এদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আকাশচুম্বী সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশবিরোধী শক্তি নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়। এদের প্রতিহত করতে হবে।

ড. সেলিম আরও বলেন, তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্যরা জাতীয় স্বার্থরক্ষায় দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করবে এবং এ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ প্রতিটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থেকে অশুভ শক্তির মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিহত করবে।

সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে নানা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তথ্য উপস্থাপন করেন তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল এ স্যাটেলাইটের সেবা নেওয়ার ফলে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহার না করলে এ অর্থ বিদেশি কোনো কোম্পানিকে দিতে হতো। ফলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোনো মুনাফা অর্জন করছে না- যারা এটি বলছে তারা জঘন্য মিথ্যাচার করছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির অন্য সদস্য এবং বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, ভৌত কাঠামো খাতসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসীম দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। দেশের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার হউক না কেন, বাংলাদেশকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিজস্ব মহিমায় এগিয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য এবং তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। এটিই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা।

জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং উপ-কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ আজ প্রকৃত অর্থে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার কোনো কারণ নেই। রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি দেশের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই এ সাফল্যের একমাত্র দাবিদার।

সভায় তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য ডা. জাহানারা আরজু, এম এনামুল হক আবীর, আমেনা কোহিনুর, আবুল ফজল রাজু, সৈয়দ আবু তোহা, ব্যারিস্টার সৌমিত্র সর্দার, অ্যাড. জামাল মিয়া, ড. শবনম জাহান, রায়হান কবীর, মেজর (অব.) এম এ সায়ীদ খান, রাশিদুল বাসার ডলার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এতে উপ-কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর অসীম সরকার, প্রফেসর শেখ আদনান ফাহাদ, সারোয়ার মামুন চৌধুরী, অ্যাড. আরেফা পারভীন তাপসী, মো. রাজীব হোসেন, মো. আলমগীর হোসেন, জামান সিকদার, সোহেল তালহা, অ্যাড. শওকত আলী পাটোয়ারী তুহিন, জামান সিকদার, সফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম সেকান্দর, জয়নাল আবেদীন, আমিনুল ইসলাম, রেজা এনায়েত, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও লিপন মন্ডল প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/মে ২২, ২০২২)