শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংগঠনের সদ্য সাবেক সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে শহরের মাধবপুরস্থ শেরপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা নাইম অভিযোগ করেন, দলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজসে তার বিরুদ্ধে ওইসব অপপ্রচারণায় দীর্ঘদিনের লালিত পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষুণ্নের অপচেষ্টা করা হচ্ছে, যা প্রচলিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

আওয়ামী লীগ নেতা এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, তিনি ছাত্রজীবনে ৯০-এর স্বৈরাচার ও রাজাকার হটাও আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ঝিনাইগাতী আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ২০০২ সালে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ও ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সু-সংগঠিত করে তোলেন। কিন্তু ওইসব সম্মেলনে বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করে চলা একটি অংশ দলের নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। ওই অবস্থায় ২০০৯ ও ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নাইম দলের সমর্থিত/মনোনীত প্রার্থী হওয়ার পরও তার বিরোধিতা করে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করেন। কেবল তাই নয়, ২০১৪ সালের সম্মেলনের পূর্বে দলীয় কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা, জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুরসহ তাকে হত্যা চেষ্টা চালায় ওই মহলটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিএনপি প্রার্থীর পাশাপাশি দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও নাইমের বিজয় ঠেকাতে না পেরে এবার গত ৯ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি পদে তাকে ঠেকাতে নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন।

সেদিন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা না হওয়ার সুবাদে তারা দলে তার শক্ত ও মজবুত অবস্থান নিশ্চিত জেনেও তাকে বিতর্কিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে জড়িয়ে নানা ধরনের সাজানো, মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক ও মানহানিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে সম্পাদক-প্রকাশকের নাম-ঠিকানা ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি অনলাইন পোর্টালে সম্প্রতি ৪ দফায় বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ ও প্রচার করে। ওইসব খবরে তাকে ফ্রিডম পার্টির সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্যও প্রকাশ করা হয়। ওইসব খবর প্রসঙ্গে নাইম বলেন, তিনি কখনোই বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী চক্রের হাতে গড়া ওই সংগঠনের সাথে জড়িত তো ছিলেনই না, বরং তাদের প্রতিহত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এছাড়া ভোলা নামে এক ছাত্রলীগ নেতার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হলেও ওই ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। বরং তিনিসহ আরও কয়েকজনকে বিতর্কিত করতে ওই মামলায় জড়ালেও পরবর্তীতে তদন্তে সত্যতা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয় আদালত। পরবর্তীতে ওই মামলায় চূড়ান্ত বিচারে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়। কাজেই দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর পর চূড়ান্ত বিচার নিস্পত্তি হওয়া একটি বিষয়কে সামনে টেনে আনাসহ তাকে বিতর্কিত করতে নানা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টিও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মহল বিশেষের চক্রান্তের অংশ ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে দাবি করে তিনি বলেন, ওইসব বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই মহলবিশেষের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারণার অবসানকল্পে সত্যিকার বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরার দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক দলকে পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছি, তেমনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (উপজেলা চেয়ারম্যান) হিসেবে সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করছি। অবহেলিত উপজেলার কাঙ্খিত উন্নয়নসহ রাতদিন মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি কামাল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় ও ওমর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ ও আবদুল হালিম, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, কাংশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক ধলু, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

(এসআর/এসপি/মে ২৩, ২০২২)