আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রুশ আক্রমণে ইউক্রেনের প্রধান সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে নির্ভরতা বাড়ছে দেশটির। গত এপ্রিলে যেখানে ১০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করেছিল ইউক্রেনীয়রা, চলতি মাসে তার পরিমাণ বেড়ে ১৫ লাখ টনে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সোমবার (২৩ মে) এ কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইউক্রেনিয়ান অ্যাগ্রারিয়ান বিজনেস ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক রোমান স্লাস্টন। খবর রয়টার্সের।

এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল প্রতি মাসে শস্য রপ্তানির পরিমাণ ৩০ লাখ টনে পৌঁছানো। তবে রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনের প্রধান সমুদ্র বন্দর অবরুদ্ধ করায় এর পরিমাণ কমে গেছে।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান গম ও ভুট্টা রপ্তানিকারক ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের কারণে কয়েক মাস ধরে দেশটির রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার ফলে বিশ্ববাজারে বেড়ে গেছে গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্যের দাম।

রয়টার্সের খবর অনুসারে, ইউক্রেনে প্রায় আড়াই কোটি টন শস্য আটকে রয়েছে। রুশ আক্রমণে দেশটির বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো বের হতে পারছে না। ইউক্রেন তার বেশিরভাগ পণ্যই সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি করতো। তবে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে দেশটি ট্রেনে অথবা তুলনামূলক ছোট দানিউব নদীবন্দর দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছে।

মানুষ চলাচলে সুবিধার পাশাপাশি ইউক্রেনের রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে গত রোববার (২২ মে) যৌথ সীমান্ত কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ ও একটি বিশেষ রেলওয়ে কোম্পানি চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে পোল্যান্ড। এদিন কিয়েভে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুদার মধ্যে এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

যৌথ সীমান্ত কাস্টমস নিয়ন্ত্রণকে ‘বৈপ্লবিক’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। তার দাবি, এর মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্ত কার্যক্রমে আরও গতি আসবে।

এছাড়া ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কুব্রাকভ বলেছেন, তাদের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে সহজে পরিবহনের জন্য কাজ করছে দুই প্রতিবেশী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা ইউক্রেনের রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য একটি যৌথ রেলওয়ে কোম্পানি চালু করতে কাজ করছি।

গত মাসে মস্কো ও কিয়েভ সফর করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, যুদ্ধ সত্ত্বেও ইউক্রেনের কৃষিপণ্য এবং রাশিয়া ও বেলারুশের সার ও খাদ্য বিশ্ববাজারে পৌঁছানোয় সহযোগিতা করতে তিনি বদ্ধপরিকর। তার এ উদ্যোগে এরই মধ্যে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের শস্য আফ্রিকা পৌঁছাতে সহায়তার কথা জানিয়েছে জার্মানিও।

বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গম সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। তাছাড়া ইউক্রেন ভুট্টা, বার্লি, সূর্যমুখী তেলের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক, আর বিশ্বের প্রায় প্রায় ৪০ শতাংশ পটাশ সারের জোগান দেয় রাশিয়া ও বেলারুশ।

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে বর্তমানে কৃষ্ণসাগর এলাকা দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম একপ্রকারে বন্ধ রয়েছে। অবশ্য জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড জানিয়েছেন, রাশিয়ার কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, কঙ্গোর মতো বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণসহ অন্তত ৩৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি গম আমদানির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল।

জাতিসংঘের খাদ্য প্রধান ডেভিড বেসলি গত মার্চ মাসে সতর্ক করেছেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রায় ৫০ শতাংশ শস্য কেনা হয় ইউক্রেন থেকে। ফলে যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের কাছে ডব্লিউএফপির খাদ্য সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে।

(ওএস/এএস/মে ২৪, ২০২২)