রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের নোটিশ অমান্য করে প্রতিপক্ষ কুয়েত প্রবাসী শাহানাজ মুকুলের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা শহরের মধ্য কাটিয়ার মনিরুজ্জামনের বিরুদ্ধে। ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় রেশমা খাতুন নামের এক নারীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গত সোমবার ভোর তিনটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার সংগ্রাম টাওয়ারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। 

শ্যামনগর উপজেলার জয়াখালী গ্রামের নাহিদ সুলতানা জানান, তার স্বামী শাহানাজ মুকুল শহরের পলাশপোল মৌজার ইটাগাছাস্থ সংগ্রামের পিছনে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ইটাগাছা ঘোষপাড়ার নিজামউদ্দিন বিশ্বাসের কাছ থেকে ৮ শতক জমি কেনেন। এরপর সেখানে বাড়িঘর বানিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন। ওই জমি শাহানাজ মুকুলের নামে নামপত্তনের পর ২০২৯ সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। স্বামী বর্তমানে কুয়েতে কর্মরত থাকায় সম্প্রতি ওই বাড়িতে স্বামীর আত্মীয় রেশমা খাতুন পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন।

নাহিদা সুলতানা আরো জানান, ২০১৬ সালে মোসলেম আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান নিজামউদ্দিনের মা ও বোনের কাছ থেকে কিছু জমি কেনেন। ওই জমির কিছু অংশ নীচু ও পিছনে হওয়ায় মনিরুজ্জামানের চোখ পড়ে তাদের জমির উপর। এরই অংশ হিসেবে মনিরুজ্জামান চলতি বছরের ৩১ মার্চ তার স্বামীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারা মতে পিটিশন ৫৫৪/২২ (সাত) মামলা করেন। মামলায় তাদের (নাহিদা) জমিতে মনিরুজ্জামান চাষাবাদ করতো বলে দাবি করে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রেজা রশিদ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে আগামি ২৯ মে এর মধ্যে জমির দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন। একইসাথে বিবাদীদের কারণ দর্শাণোর নির্দেশ দেন। জমি নিজেদের দখল দেখাতে গত ১২ মে রাত ৯টার দিকে মনিরুজ্জামান, কামালনগর গ্রামের মৃত. হাবিবুর রহমানের ছেলে হযরত আলী, পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার মৃত সুজাত আলীর ছেলে রবিসহ কয়েকজন তাদের জমিতে যেয়ে রেশমা খাতুনকে ঘের থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে রেশমা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে হামলাকারিরা চলে যায়।

১৫ মে দিবাগত রাত তিনটার দিকে মনিরুজ্জামান, হযরত আলী ও রবিসহ কয়েকজন হাতে দা, লাঠি ও লেঅহার রড নিয়ে বাড়িতে ঢুকে তাকে ও রেশমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তাকে ও রেশমাকে মারপিট ও লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। উপরন্তু পুলিশের এক কর্মকর্তা এসে ওই জমি ছেড়ে না দিলে জীবনে বেঁচে থাকা কঠিন হবে বলে তাদেরকে বলে যায়। তবে তার স্বামী কুয়েত দুতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় তার জমি জবরদখলের চেষ্টা ছাড়াও স্ত্রী ও রেশমার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। আবেদনের কপি সাতক্সীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে শহরের ইটাগাছার সংগ্রাম টাওয়ারের পাশে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী, সাহেব আলী, ফজিলা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, মনিরুজ্জামনের বাড়ি কালিগঞ্জে। তিনি ২০১৩ ও ১৪ সালে জামায়াত শিবিরের পৃষ্ট পোষক ছিলেন। সৌদি আরবে চাকুরি করার সুবাদে বহু টাকার মালিক মনিরুজ্জামান জামায়াতের তহবিলে মাসিক টাকা দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি সংগ্রাম টাওয়ারের পিছনে বহু জমি কিনেছেন। টাকার জোরে তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয় দালাল ও সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে জমি কিনে নিজের ইচ্ছামত দখল করে চলেছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৫ মে দিবাগত রাতে মনিরুজ্জামান তার সন্ত্রাসী বানিী দিয়ে শাহানাজ মুকুলের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে তার স্ত্রী নাহিদা সুলতানা ও আত্মীয় রেশমাকে মারপিট করেছেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তবে মনিরুজ্জামান সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) ম্যানেজ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ চেপে রেখে তারপক্ষে একতরফা প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দাখিল করেই তাদের (নাহিদা) জমি জবরদখল করে নেবেন এমন কথা বলে বেড়াচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মধ্য কাটিয়ার মনিরুজ্জামানের সাথে মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টায় তার ০১৯৩২-৫৩৪৪১১ নং মোবাইলে কথা বলতে চাইলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর জানান, বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুমানা আইরিন জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। অফিসে যেয়ে বিস্তারিত জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/মে ২৪, ২০২২)