আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। এরমধ্যে আয়বর্ধক কাজের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দরিদ্র, অনগ্রসর নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে গ্রামীণ নারীদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রকল্পটি সারাদেশের ন্যায় বরিশালে ব্যাপক সারা জুগিয়েছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়িত আইজিএ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন গ্রামীণ জনপদের নারীরা। ফলে গ্রামের নারীরা এখন নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।

জেলার গৌরনদী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সাল থেকে অনগ্রসর নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রকল্পটি চালু করেছেন। প্রকল্পের আওতায় নারীদের টেইলারিং, ব্লক বাটিক, বিউটিফিকেশন, ক্রিষ্টাল শোপিস ও ডেকোরেটর, মোমবাতি তৈরি, মাসরুম, ভার্মি কম্পোষ্ট ও মৌ চাষ, ফ্যাশন ডিজাইন, শতরঞ্জি ও হস্তশিল্প, মোবাইল সার্ভিসিং এন্ড রিপেয়ারিং, কম্পিউটার সার্ভিসিং এন্ড রিপেয়ারিং, সেলসম্যানশীপ ও ফ্রন্টডেক্স ম্যানেজমেন্ট ও মটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রশিক্ষণের মেয়াদ অনধিক তিন মাস। প্রশিক্ষণ শেষে একেকজন নারীকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ১২ হাজার করে টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া গৌরনদী উপজেলার বানিয়াশুরী গ্রামের ফারুক শরীফের মেয়ে এক সন্তানের জননী ইসরাত জাহান মনি জানান, ২০১৯ সালে রংপুরের এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে মেনে নেয়নি। সন্তান জন্ম ভুমিষ্ট হওয়ার পর স্বামীও তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে তিনি মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পরেন। আর্থিক অনটনের কারনে লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়। এরইমধ্যে জানতে পারেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখানো হচ্ছে। পরবর্তীতে উপজেলা থেকে দুই মাস মাসরুম চাষ ও ভার্মি কম্পোষ্টের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি তার বাবার বাড়িতে বসেই ভার্মি কম্পোষ্ট ও মাসরুম চাষ শুরু করেন। পাশাপাশি গ্রামের অন্য নারীদের এ চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। বর্তমানে তিনি ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া তাকে (মনি) অনুসরণ করে ওই গ্রামের আটজন নারী ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

ফ্যাশন ডিজাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হওয়া ইয়াসমিন বেগম জানান, করোনা ভাইরাসের মধ্যে তার স্বামীর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্যারালাইজ্ড হয়ে যায়। অসুস্থ স্বামী ও তিনটি সন্তান নিয়ে তিনি চরম বিপাকে পরেন। পরবর্তীতে উপজেলা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ভাবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার (ইয়াসমিন) তৈরিকৃত পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এ কাজ করে তিনি নিজে যেমন আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন, তেমনি পরিবারের আর্থিক সমস্যা অনেকটা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।

পুতুল রায় নামের অপর এক গৃহবধূ বলেন, স্বামীর একার আয়ের উপর আমাদের পরিবার নির্ভরশীল ছিলো। তাই উপজেলা থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার পাচ্ছি। ঘরে বসে প্রতি মাসে টাকা জোরগার করতে পারছি।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আইজিএ প্রকল্পের ফ্যাশন ডিজাইনার প্রশিক্ষক ফাতেমা খান যুথী জানান, অনেক নারীরা তার কাছ থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ফলে এ উপজেলায় এখন নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এমনকি এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা গ্রামীণ জনপদের স্বল্প শিক্ষিত নারীদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলছেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাহানারা পারভীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যেসব কর্মসূচীগুলো গ্রহন করেছেন, তারমধ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আইজিএ প্রকল্পটি অন্যতম। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় পাঁচশ’ নারী এ যাবত বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি এখনও প্রায় একশ’ জনের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ নারীরা ঘরে বসেই নিজেদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গৌরনদী মহিলা সংস্থার সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ইতোমধ্যে নারীদের বিভিন্ন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে নারীদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। যা এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ।

(টিবি/এসপি/মে ২৬, ২০২২)