স্টাফ রিপোর্টার : পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই দরপতনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ২ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৯ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমে গেছে।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৫টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে গত সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ২০ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩০৭ দশমিক ২২ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে ৯০ দশমিক ২০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছে ৪২৩ পয়েন্ট।

বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা চার সপ্তাহ পতনের ধারায় রয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৯ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে ৫৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ চার সপ্তাহের টানা পতনে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটি কমেছে ১৭১ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচক এবং ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকের পাশাপাশি ইসলামি শরিয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা চার সপ্তাহ কমেছে। গত সপ্তাহেও এই সূচকটি কমেছে ৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৯ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে কমে ১৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ চার সপ্তাহের পতনে এই সূচকটি কমেছে ৯০ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯৮ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ২৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ২৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ১৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। মোট লেনদেন কম হারে কমার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩০ কোটি ৫১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ১১০ কোটি ৯২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- শাইনপুকুর সিরামিক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সাউথইস্ট ব্যাংক, ফরচুন সুজ, জিএসপি ফাইন্যান্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং এসিআই ফরমুলেশন।

(ওএস/এসপি/মে ২৭, ২০২২)