ইট-বালু ব্যবসায়ীর দখলে খেলার মাঠ!
তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : এটি এলাকার একমাত্র খেলার মাঠ। এখানে সপ্তাহে ২দিন হাট বসে। সপ্তাহের বাকী ৫ দিন এলাকার শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলাধূলা করে। যুগযুগ ধারে মাঠটি হাট ও খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রভাবশালী মাঠে ইট,বালুও খোয়া রেখে জমিয়ে ব্যবসা করছেন। তিনি খেলার মাঠকে উন্মুক্ত গোডাউনে পরিনত করেছেন। সরকারি মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখে ব্যবসা করে নিজে লাভবান হচ্ছেন। এতে মাঠের খেলাধূলার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। তারা মাঠ থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাথানডাঙ্গা বাজার সংলগ্নমাঠে এ অবস্থা বিরাজ করছে।
বাথানডাঙ্গা গ্রামের প্রভাবশালী এলোয়ার শেখ দীর্ঘদিন ধরে মাঠে ইট-বালুর ব্যবসা করে আসছেন। তিনি ওই এলাকার প্রভাবশালী। তাই ভয়ে কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি ওই খেলার মাঠের পূর্বপাশে এলোয়ার শেখ নামে এক ব্যক্তি ইট-বালু ও খোয়া মজুদ করে ব্যবসা করছেন। উম্মুক্ত এ গোডাউনের ইট, বালু ও খোয়া রাখায় মাঠের দুর্বাঘাস মরে যাচ্ছে। মাঠের সবুজ প্রকৃতি নষ্ট হচ্ছে। এতে মাঠের খেলাধূলার পরিবেশন ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া স্তুপ করা বালু বাতাসে উড়াছে। এতে খেলাধূলা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
বাথানডাঙ্গা গ্রামের নওশের মোল্লা, কাবুল শেখ জানান, বাথানডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন সরকারি খেলার মাঠে সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবারে হাট বসে। বাকি দিনগুলোয় মাঠটিতে স্থানীয় শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলাধুলা করে। মাঠটি বহুকাল আগে থেকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান মাঠটি দখল করে ইট-বালুর ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে এলাকার বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা খেলাধূলা করতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক যুবক বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে এই মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাটমিন্টন খেলে আসছি। মাঠ দখল করে ইট-বালু ও খোয়া রেখে ব্যবসা করা হচ্ছে। এ কারণে এখন আর এই মাঠে খেলাধুলা করা যায় না। খেলতে গেলে খোয়া ও ইটের আঘাতে আহত হতে হয়।’
ওই গ্রামের কাশেম মোল্লা বলেন, মোবাইল ও মাদকাসক্তির এই সময়ে মাঠটি দখল হয়েগেছে। মাঠে খেলাধূলা ও হাট বসার পরিবেশ নেই। এতে যুব সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যারা মাঠ দখল করে মাঠের পরিবেশ নষ্ট করছে। এলাকার ছেলেদের খেলাধূলায় ব্যাঘাত সৃস্টি করছে। তাকে মাঠ থেকে উচ্ছেদ করে এলাকার খেলাধূলার পরিবেশ তৈরী করতে হবে। এটি আমাদের প্রাণের দাবি।
এলোয়ার শেখ সরকারি খেলার মাঠ দখল করে ইট-বালুর ব্যবসার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নতুন ইট-বালুর ব্যবসা করছি না। দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠেই ইট-বালু রেখে ব্যবসা করছি। এতে কেউ কোন বাঁধা দেয় নি। এখন আর মাঠে আগের মত খেলা হয় না। তাই আমি ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছি। সরকারের যখন মাঠ লাগবে, তখন আমি মাঠ থেকে ইট,বালু,খোয়া সরিয়ে নেব। মাঠ ছেড়ে দেব।’
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘মাঠ দখল মুক্ত করতে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তারপরও জনস্বার্থে আমরা বিষয়টি খোঁজ নেব। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
(টিকেবি/এসপি/মে ২৯, ২০২২)