শঙ্খচূড়

একটা ছেলে ছিল যার নাম ছিল বুবুন। তার একটা চশমা ছিল।

রোজ রাতের মতো, সেই ছেলেটা শোয়ার আগে চশমা টেবিলে রেখে শুয়ে পড়তো।

কিন্তু তারপর, হলো এক অদ্ভুত চমৎকার!

চাড়াৎ ভরাৎ চাড়াৎ ভরাৎ।… গড়গড়।… হটাত ওই চশমাটা হায় তুলে উঠলো,

আর সামনেই একটা আয়না রাখা ছিল। তার মধ্যে নিজেকে দেখে সে চমকে উঠলো!

বললো, “এইরে, আমার চোখ আছে! আমার হাত আছে! বাঃ!”

এই বলে সে তার দুটো হাত দিয়ে নাচতে লাগলো। তারপরে, ও ভাবলো আর চারিপাশটা একটু ঘুরে দেখতে হবে তো।

এই ভেবে টেবিল দিয়ে নিচে ঝাঁপ দিলো। কি করবে, ওর পা তো ছিল না তাই হাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো।

কিন্তু হটাৎ একটা আওয়াজ হয়ে উঠলো।

শোনো, তোমার মধ্যে প্রাণ দেয়া হয়েছে যেটা ততক্ষনই থাকবে যতক্ষণ তোমাকে কেউ এই অবস্থায় না দেখতে পায়। কিন্তু যদি কেউ তোমাকে প্রাণ অবস্থায় দেখতে পায় সঙ্গে সঙ্গে তুমি আবার আগের মতো হয়ে যাবে।

এইটা শুনেই ওই অদ্ভুত চশমাটা বলে উঠলো “কে? কোথায় থেকে বলছেন?” কিন্তু কোনোই উত্তর ও পেলো না।

ও ভাবলো যে ওটা কোনো মনের ভ্রম হবে। আর এটাকে কোনো গ্রাহ্য না করে ও এগিয়ে গেলো।

আস্তে আস্তে ও হাত দুটি দিয়ে হাঁটতে লাগলো। খানিকটা হেঁটেই ও থেমে গেলো । দেখতে পেলো একটা বিশাল বরো কালো একটা জিনিস।

ও ভয় পেয়েগেলো! কিন্তু তার পর ওর মনে পড়লে যে এটা হলো “আলমারি” জাতে ওর মালিকরা জামা কাপড় রাখে । যাক শান্তি হলো।

তার পর ও এগিয়ে গেলো। দেখলো একটা বিশাল দরজা। ভাবলো যে একটু ঘুরে তো দেখতেই হবে। কিন্তু কি ভাবে ওপার যাওয়া যায়।

তার পর ও একটা বুদ্ধি খাটাল। দুটো দরজার ফাঁক দিয়ে গোলে যাওয়া যাবে এই ভেবে ও আস্তে করে দরজা ভেতর দিয়ে অন্য ঘরে প্রবেশ করলো।

বেশ, তার পর আর কি? একটি নতুন দুনিয়া। বিশাল বরো খাট, শোফা, টিভি সেট, হোম থিয়েটার, মাছের ঘর, .. এই সব দেখে ও হফচকিয়ে গেলো।

“ওরে বাবা রে!” ও বলে উঠলে। ও ভাবলো যে মানুষরা কত বরো বরো জিনিস পত্র বেবহার করে।

এই সব ভেবে ও অবাক হয়ে একটা একটা করে প্রত্যেকটি জিনিস দেখতে লাগল।

কিন্তু কথায় আছে না – ‘যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধ্যে হয়।” চিচিচুচু চিচিচুচু।… আওয়াজ হতে লাগলো।

চশমা এইটা শুনে খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো। প্রথমে ও বুঝদে পারেনি।

কিন্তু তার পর ও টের পেলো এই আওয়াজটা হচ্ছে একটি ইঁদুরের। জিনিসটা জানতে পারলো ও পরিকী-মরি করে ছুট দিলো।

ইঁদুর ওকে খাবার ভেবে ওর পিছনে ছুটতে লাগলো। ইঁদুরের সাথে কি এই চশমা পেরে উঠতে পারে?

তাও চশমাটা আপ্রাণ চেষ্টা করতে-করতে শেষে জোর ঝাঁপ দিলো আর কিভাবে দরজার ফাঁক দিয়ে গোলে রান্নাঘরে এসে গেলো।

ইঁদুরটা আর ওটাকে অতো গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেলো। যাক, ইঁদুর থেকে ছাড়া পেয়ে চশমাটা নিশ্চিন্ত হলো।

তারপর ও চোখ ঘুরিয়ে চারিপাশে দেখলো যে অনেক খাবার পেতে ঢাকা দিয়ে রাখা আছে। এই ঘরে ফ্রিজ নেই তাই খাবারগুলি এইভাবে রান্নাঘরের স্ল্যাবে পেতে ঢাকা দিয়ে রেখে দেয়া হয়।

ও দেখলো যে একটু খিদে-খিদে পাচ্ছে! তো আর কি করবে, বেশ একটা একটা করে খাবার খেতে শুরু করতে লাগলো।

সর্ব প্রথম ও খেলো ফুলকপির তরকারি। একটু খানি খেয়ে ওর মন ভোরে গেলো তাই তার পর ও খেলা ইলিশ মাছের ঝাল। প্রায় অনেকটা শেষ করেই দিয়েছিলো কি হটাত ধরাস করে দরজাটা খুলে গেলো।

বুবুনের মা রান্নাঘরে ঢুকে দেখলো যে চশমাটা মাছ খাচ্ছে। আর যেইনা দেখলো সেই অধ্যুত চশমাটা আবার আগের মতো নির্জীব হয়ে গেলে।

বুবুনের মা ঘুমের ঘোর ভেবে চোখ রোগরে দেখলো যে চশমা তা এমনি পরে রয়েছে। ভাবলো যে ইঁদুর এসে মনে হয় সব খুলে দিয়ে গেছে।

তাই আর ঘটনাটাকে বেশি গ্রাহ্য না করে ওই চশমাটাকে নিয়ে আবার বুবুনের মাথার কাছের টেবিল রেখে দিলো।…