রাজন্য রুহানি, জামালপুর : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া মাসুমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের বয়সিং গ্রামের মো. খলিলুর রহমানের ছেলে।

শনিবার রাতে সংঘটিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান।

পারিবারিক সূত্র জানায়, কৃষকদম্পতি খলিলুর রহমান ও জমেলা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মাসুদ মিয়া। পড়াশোনায় মাধ্যমিক পেরোতে পারেননি, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পাড়ি জমান সৌদি আরবে। ৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন। এরপর ২০১৫ সালের দিকে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য ছুটে যান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। এরপর সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোর একটি কোম্পানিতে গাড়িচালকের চাকরি নেন। সেখানে তিনি একসপ্তাহ দিনে এবং পরের সপ্তাহ রাতে ডিউটি করতেন।

জানা গেছে, মাসুদ ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। তার ২ বছর বয়সী একটা ছেলে এবং ৭ বছর বয়সী একটা কন্যাসন্তান রয়েছে। স্ত্রী সুমি আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি সীতাকুণ্ডে ভাড়াবাসায় থাকতেন। দুই অবুঝ শিশুর লালনপালনসহ সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন; সে চিন্তায় দু'চোখে অন্ধকার দেখছেন মাসুমের স্ত্রী।

নিহতের মা জমিলা বেগম বিলাপ করে বলেন, আমার বাবারে কেউ আইনা দেও, আমি দেখমু। বাবা তো আর আমারে মা মা কইরা ডাকবো না, বাবা তো আর টেহা পাঠাবো না।

নিহতের চাচা মোজাম্মেল হোসেন জানান, বিস্ফোরণের রাতেই নাকি মাসুদের নাইট ডিউটির সাপ্তাহিক শেষদিন ছিলো। কে জানতো ওই রাতটাই তার জীবনের শেষ ডিউটি! মাসুদ পরিবারের বড় ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ার তার মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেলো।

তিনি আরো জানান, নিহতের লাশ আনার জন্য তার স্ত্রী ও ভাই চট্টগ্রাম আছেন। লাশ পৌঁছার পর বৃহষ্পতিবার সকালে জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসা জানান, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মাসুদ মিয়া নামে সরিষাবাড়ীর এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। তার লাশ চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় পৌঁছানোর পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

(আরআর/এসপি/জুন ০৮, ২০২২)