আবীর আহাদ


একজন সৈয়দ আবুল হোসেন। প্রখর মেধাবী। উন্নত মনন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। কর্মনিষ্ঠা ও সততার মূর্তপ্রতীক। বিদ্যানুরাগী। পরম মানবতাবাদী। সাহস, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও প্রতিভাময়তায় মণ্ডিত এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি যেখানেই হাত দেন, সেখানেই যেনো সোনার ফসল ফলে। সংকল্প ও দৃঢ়তার এক অনন্য প্রবাদপ্রতিম চরিত্র। অগণিত গ্রন্থের লেখক-গবেষক। একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক। কয়েকবার সংসদ সদস্যও হয়েছেন। আত্মম্ভরিতা ও অহমিকাবোধ পরিহার-করা দেশের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়েও তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল-নিরাভরণ জীবন যাপন করেন। বিশেষ করে দুস্থ ও বিপন্ন মানবতার জয়গান গাওয়াই যেনো তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের একমাত্র ব্রত।

সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শাণিত একজন হৃদয়বান ব্যক্তিত্ব। দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত অনন্য সুকুমার মনোবৃত্তির অনুপম হৃদয়ের অধিকারী সৈয়দ আবুল হোসেনকে অত্যন্ত নিকট থেকে দেখার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। সেই ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত, বিএনপি-জামায়াতের চরম দু:শাসন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাসিনা-মাইনাসের কঠিন রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের মহাদুর্দিনে সৈয়দ আবুল হোসেনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের নামে নানান সভা-সমাবেশ, আলোচনাসভা-সেমিনারসহ মাঠেময়দানে নানান উপায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখা, তথা আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরলস কাজ করেছি। আমার কিছু বই, যেগুলো প্রকাশ করার জন্যে কোনো প্রকাশনা সংস্থা সাহস করেনি, সেক্ষেত্রে সৈয়দ আবুল হোসেনের সহযোগিতায় আমি নিজেই তা প্রকাশ করেছি।

জননেত্রী শেখ হাসিনা সময় মতো সৈয়দ আবুল হোসেনকে যথাযথ স্নেহের পরশ দিয়ে তাঁকে ২০০৯ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। তাঁর সময়ই শুরু হয় বহুলালোচিত পদ্মাসেতুর কার্যক্রম। কিন্তু বিএনপির পরশ্রীকাতরতা, ইন্ধন, চক্রান্ত ও দেশীবিদেশী কিছু কায়েমী স্বার্থান্বেষি ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বায়বীয় গন্ধ আবিষ্কার করে অর্থবিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়। দোষ দেয়া হয় যে, বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তার পাশাপাশি সড়ক ও যোগযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও সেই তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত! বিশ্বব্যাঙ্ক সৈয়দ আবুল হোসেন ও অন্যান্যকে পদচ্যুত ও গ্রেফতার করলে পুনরায় তারা পদ্মাসেতুতে ফিরে আসবে। অন্যথায় পদ্মাসেতুসহ দেশের অন্যান্য প্রকল্প থেকেও বিশ্বব্যাঙ্ক সরে আসবে বলে চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধ্য হয়েই সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে পদচ্যুত করেন এবং সেতুসচিব মোশাররফ হোসেনকে কারাগারে প্রেরণ করেন। সে এক কঠিন বেদনাদায়ক ঘটনা। বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ ছাড় না দিয়েই সেই অর্থ আত্মসাতের চরমতম মিথ্যার কাছে তৃতীয় বিশ্বের একটি দুর্বল দেশের সৎ ও জনপ্রিয় সরকার বলা চলে অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন! এতে শেখ হাসিনা সরকার ঘরে-বাইরে একটি চরমতম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। কিন্তু শেখ হাসিনার বহুলকথিত একটি বাক্য: 'রাখে আল্লাহ্ মারে কে, মারে আল্লাহ্ রাখে কে' এ বাক্যটি অতি দ্রুতই সামনে চলে আসে! পদ্মাসেতুর তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাঙ্ক ও সেতুটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কানাডিয়ান কোম্পানি এনসি লাভালীনের মধ্যে কানাডার একটি আদালতে মামলা শুরু হয়। সেই মামলায় বিচারে কানাডার আদালত দ্ব্যর্থহীন রায় দেন যে, পদ্মাসেতুতে কোনোপ্রকার দুর্নীতি হয়নি। এর ফলে বিশ্বব্যাঙ্ক ও তাদের এদেশীয় দালালচক্রের মুখে চুনকালি পড়ে যায়। বিশ্বব্যাঙ্ক বলা চলে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে পদ্মাসেতুতে আবার ঋণদানের প্রস্তাব পেশ করেন। অপমানে-লাঞ্ছনায় দগ্ধ-হওয়া দৃঢ়তার প্রতীক শেখ হাসিনা প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বব্যাঙ্ককে মুখের ওপর 'না' করে দেন। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করে, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু করবো। তিনি অতঃপর পদ্মাসেতুর সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। পদ্মাসেতু আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃঢ়তা ও সক্ষমতার প্রতীক হয়ে বাঙালি জাতিকে মহিমান্বিত করেছে।

কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন তাদের স্ব-স্ব পদে সম্মানের সাথে ফিরে এলেও পদ্মাসেতুর অন্যতম উদ্যোক্তা সৈয়দ আবুল হোসেন আর ফিরে আসেননি! একজন নির্দোষ কর্মবীর ও বহুগণে গুণান্বিত সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁর ওপর আরোপিত মিথ্যাচারের খড়গের নির্মম বলির শিকার হয়ে পর্দার অন্তরালে চরমতম মানসিক যাতনায় ধুকে ধুকে দিনাতিপাত করছেন! এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। সৈয়দ আবুল হোসেনকে অনতিবিলম্বে সসম্মানে তাঁর পদে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁকে সেই মানসিক যাতনা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।