বিনোদন প্রতিবেদক : ছোটপর্দার সুপরিচিত নাম সাদিয়া জাহান প্রভা। বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন এবং বহু নাটকে তার উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে বারবার। এসেছেন আলোচনায় আবার কখনো কখনো সমালোচনার পাহাড় গড়েছেন তিনি নিজেই। এবার বিদায় জানালেন অভিনয় থেকে কিন্তু দোষ দিয়ে গেলেন সাংবাদিকদের! এমন দাবি করেন অভিনেত্রী নিজেই।

বিতর্কিত এই অভিনেত্রীর বর্তমান হালচাল জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল তার সঙ্গে। পরিচয় জানার পর প্রভা শুরুতেই বলেন, ‘আমি তো কোনো ইন্টারভিউ দিই না।’ পরে তাকে জানান, ‘ইন্টারভিউয়ের জন্য না। আপনার সাম্প্রতিক বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ফোন করেছি। এই যেমন, আপনার বর্তমান ব্যস্ততা, ঈদের জন্য কী কী কাজ করছেন, এসব।’

জবাবে প্রভা বলেন, ‘আমি কোনো কাজ করছি না। কাজ ছেড়ে দিয়েছি।’ কারণ জানতে চাইলে অভিনেত্রী দাবি করেন, ‘সাংবাদিকদের অত্যাচারে কাজ ছেড়েছি।’ সাংবাদিকরা আপনাকে কীভাবে অত্যাচার করেছে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান প্রভা। বলেন, ‘আর কোনো কথা বলতে চাই না। দোয়া রাখবেন।’ এর পরই ফোন রেখে দেন অভিনেত্রী।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ঘেটে জানা গেছে, রোজার ঈদে প্রভা অভিনীত একাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে। তার মধ্যে একটি ‘লাইলি মজনুর পানের দোকান’। সেখানে তাকে পান বিক্রেতার চরিত্রে দেখা যায়। কোরবানির ঈদেও প্রভাকে বেশ কয়েকটি নাটকে দেখা যাবে। অথচ তিনি বললেন কাজ ছেড়ে দিয়েছি। কোন অভিমানে এমন জবাব অভিনেত্রীর, সেই উত্তর আপাতত অজানা।

এদিকে, বছর খানেক আগেও একবার প্রভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ঢাকাটাইমস। উদ্দেশ্য ছিল তার সাক্ষাৎকার নেওয়া। সে বারও ফোন ধরে অভিনেত্রী সাফ জানিয়ে দেন, অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতি নাকি তার বিরাগ রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাক্ষাৎকার দিই না। কিছু মনে করবেন না। পরে কোনো সময় কথা হবে।’

কেন তিনি অনলাইন পোর্টালকে সাক্ষাৎকার দেন না? সে সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালে একটি স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী। দেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল রং-রস দিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে সে ঘটনা। তাতে আরো বেশি হেনস্তার শিকার হন প্রভা। এরপর থেকেই তিনি এড়িয়ে চলেন অনলাইন পোর্টাল। যদিও এবার তা এড়িয়ে গেলেন।

২০০৫ সালে মডেলিংয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় আগমন প্রভার। এরপর মেরিল ট্যালকম পাউডারের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসেন আলোচনায়। পরবর্তীতে তিব্বত, পন্ডস, বাংলালিংক, জুঁই তেলের বিজ্ঞাপনেও তাকে দেখা যায়। এরপর একের পর এক নাটক, টেলিফিল্মে কাজ করেও জয় করেছেন দর্শকমন। তারই মধ্যে আছড়ে পড়ে বিতর্কের সুনামি।

২০১০ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে সহপাঠী রাজিব আহমেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রভার। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল তাদের বাগদানও হয়। তার মধ্যেই প্রভা মন দিয়ে ফেলেন টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বকে। ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বিয়েও করেন। সাবেক প্রেমিক রাজিব এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে প্রভার কিছু আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ করে দেন।

ব্যস, শোবিজাঙ্গণে শুরু হয় ছি ছি। চারদিকে প্রভার সমালোচনা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন। ভেঙে যায় অপূর্বর সঙ্গে তার সাজানো সংসার। ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। প্রভার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন নাটক-বিজ্ঞাপনের পরিচালক-প্রযোজকরা। তারই জেরে অভিনয় জীবনে সাময়িক বিরতি আনেন অভিনেত্রী।

তবে থেমে থাকেনি প্রভার জীবন প্রবাহ। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা মাহমুদ শান্তকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী। টেকেনি সে সংসারও। ২০১৪ সালে প্রভা ও মাহমুদের বিচ্ছেদ ঘটে। প্রায় দুই বছর অভিনয় থেকে দূরে থাকার পর ২০১৩ সালের মার্চে কায়সার আহমেদ পরিচালিত খণ্ড নাটক ‘প্রণয়িনী’তে অভিনয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় ফিরে আসেন প্রভা।

বর্তমানে টিভি নাটক নিয়ে মোটামুটি ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন আলোচিত এই অভিনেত্রী। খণ্ড নাটকের পাশাপাশি কাজ করেন ধারাবাহিকেও। ব্যক্তিজীবনে বহুদিন একা আগে থাকলেও বছর দুয়েক ধরে অভিনেতা শ্যামল মাওলার সঙ্গে প্রভার সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের একসঙ্গে দেখাও গেছে। তবে নিজেদের সম্পর্কে এখনো সিলমোহর দেননি প্রভা বা শ্যামল।

(এম/এসপি/জুন ২১, ২০২২)