রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের তিনটি বাড়িতে একই রাতে পরপর ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। শুক্রবার ভোর তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপি এ ডাকাতি অনুষ্ঠিত হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা ঘরের তালা ভেঙে ই সব পরিবারের সদস্যদের  অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে রেখে নগদ টাকা, মোবাইল সেট, বাই সাইকেল ও সোনার গহনাসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করেছে।

শ্রীপুর গ্রামের (কামারকুড়ো) গ্রামের আব্দুর রউফ এর ছেলে আগরদাঁড়ি দাখিল মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন জানায়, শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে ১০ -১২ জনের একদল ডাকাত তাদের বাড়িতে আসে। এদের অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে দুই জনের বয়ম ৫০ এর কাছাকাছি হবে। মুখে গামছা বাঁধা সাত/আট জন ডাকাত দরজার ছিটকানি ভেঙে ঘরে ঘরে ঢোকে।

এ সময় তার গলায় দা ধরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে বেঁধে ফেলে। এ সময় তাদের ঘর থেকে পাঁচ হাজার নগদ টাকা, দুইটি বিদেশী কম্বল, কয়েকটি শাড়ি, একটি বাই সাইকেল, দুইটি রুপার চুড়ি ও দুইটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। লুট করা মালামালের দাম ৩০ হাজার টাকা। পরে তারা রিজিয়া খাতুনের বাড়ির দিকে চলে যায়। সে যাতে চিৎকার করতে না পারে এ জন্য তার গলায় দা ধরে হুমকি দিয়ে যায়।

আমজাদ হোসেনের স্ত্রী রিজিয়া খাতুন জানান, আব্দুর রউফ এর বাড়িতে ডাকাতি করার পর ডাকাত দলের সদস্যরা ভোর সোয়া তিনটার দিকে তার বাড়িতে এসে শাবল দিয়ে দরজা ছাড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। পরে ৭/৮ জন তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাকে কয়েকটি চড় মারে। অস্ত্রের মুখে জিম্বি করে তার ঘরে থাকা চারটি মোবাইল সেট, দেড় হাজার টাকা, বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসা মেয়ে রিক্তামনির কানের দুল ছিঁড়ে নেয়। এ ছাড়া বাড়ির বেশ কিছু ব্যবহার্য জিনিস তারা নিয়ে যায়। লুট করে নেওয়া মালামালের মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

একই গ্রামের রুহুল আমিনের স্ত্রী রিনা খাতুন জানান, রিজিয়া খাতুনের বাড়িতে ডাকাতি শেষে ওই ডাকাত দলের সদস্যরা ভোর চারটার দিকে তার দরজার ছিটকানি ভেঙে ঘরে ঢোকে। এ সময় তাকে মারপিট করে গলায় দা ধরে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা দইটি সোনার কানের মাকড়ি ছিড়ে নেয়। এক হাজার নগদ টাকা ও দুটি সিম্পোনি ফোনসহ ১৭ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে মাঠ দিয়ে নেবাখালির দিকে চলে যায়।

রিজিয়া খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ আসে। ডাকাতি হলেও তাদেরকে চুরির ঘটনা উল্লেখ না করলে অভিযোগ নেওয়া হবে না বলে যায়। সে অনুযায়ি তিনি ডাকাতির স্থলে চুরির ঘটনা উল্লেখ করে শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগপত্রে আরাফাত ও রানী খাতুনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা উল্লেখ করে তাদরেকে সাক্ষী করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স.ম কাইয়ুম জানান, তিনটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। এ ঘটনায় ওই তিন পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন ভোর তিনটার দিকে সাতক্ষীরা সদরের বল্লী ইউনিয়নের ঘরচালা গ্রামের আব্দুস সামাদ ফকিরের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা বাড়ির কোলাপসিগ্যাল গেটের তালা ভেঙে বাড়ি ঢুকে পরিবারের সদস্যদের মারপিটের পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ দুই লাখ টাকা, ১০ ভরি সোনার গহনাসহ ১০ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গৃহকর্তা আব্দুস সামাদ বাদি হয়ে সদর থানায় ৪৭ নং মামলা দায়ের করেন।

ওই পরিবারের ছোট ছেলে সাইদুরের স্ত্রী সেনা বাহিনীতে চাকুরি করার সুবাদে পুলিশ তালা উপজেলার কাশিয়াডাঙা গ্রামের মিজানুর সরদারের ছেলে রুবেল ইসলাম, সদরের ঘরচালা গ্রামের আরশাদ সরদারের ছেলে ইকরামুল সরদার, একই গ্রামের রেজাউদ্দিন ফকিরের ছেলে আলম ফকির, মৃত মনিম ফকিরের ছেলে মনা ও গোবিন্দকাটি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তারকৃত ইকরামুলের দুই শ্যালককে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ডাকাতির মালামাল উদ্ধার হয়েছে কিনা জানা যায়নি। এর দুই দিন না যেতেই শ্রীপুর গ্রামে ডাকাতি হলো। যদিও পুলিশ বছলে চুরি।

(আরকে/এসপি/জুন ২৪, ২০২২)