ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আজ শনিবার ২৫ শে জুন ২০২২। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে শেষ পর্যন্ত বাঙালির স্বপ্নের মিনার-পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। এটি নিশ্চয়ই নিছক স্টিলের কোনো কাঠামো নয়, পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের নাম। জাতীয় অহংকার ও সাহসের আরেক নাম। সক্ষমতার প্রতীক। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল মাইলফলক।আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন..বাংলাদেশের  ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

এরই মধ্যে বহু চ্যালেন্স আর বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু। এই সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে পূর্ণরুপে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পদ্মা সেতুর কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৯৫ শতাংশ। আর পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

সকল আলোচনা-সমালোচনা, ষড়যন্ত্র রুখে পদ্মার বুকে এখন দৃশ্যমান সেতুটি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটির পিলারগুলো। প্রতিটি পিলারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন। যে সেতু বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। ভাগ্যে খুলবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির।

আর পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশজ উৎপাদনে ও আয়ে বছরে যুক্ত হবে আরো কয়েক বিলিয়ন ডলার করে। আরো অগণিত সেতু হবে এই দেশে, হবে আরো অগণিত মেগাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন। প্রয়োজন শুধু যোগ্য নেতৃত্বের। একজন সুযোগ্য নেতা দেশকে, জনগণকে কতখানি সামনে নিয়ে যেতে পারে তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা আর সেই সঙ্গে স্বাধীনতা, বিজয় ও শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। এমন সাফল্যে বাংলার মানুষ যতখানি আনন্দে উদ্বেলিত, ঠিক ততখানি দুঃখে ভারাক্রান্ত দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তি। এই সেতু দিয়ে মার্কিন পতাকা, বিশ্বব্যাংকের পতাকা, পাকিস্তানি পতাকা উড়িয়ে মাথা নত করে যেতে হবে সেসব শক্তিকে। আর আমরা উড়িয়ে যাব বাংলাদেশের লাল সূর্য অঙ্কিত সবুজ পতাকা নিয়ে মাথা উঁচু করে। অন্তত এটুকু তফাত তো হবেই। আর এদেশীয় যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তারা তা নৌকায়ও যেতে পারবে না, নৌকার প্রতি যে তাদের চরম অনীহা!

দেশ ও জাতি আক্ষরিক অর্থে কী পাবে এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে? ১. প্রতিবছর দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে শতকরা ১.৩ থেকে ২ ভাগ, আর রেল যোগাযোগ পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে এই বৃদ্ধির পরিমাণ আরো ১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। টাকার অঙ্কে প্রতিবছর বাংলাদেশের দেশজ আয়ে সংযুক্ত হবে প্রায় এক লাখ এগারো হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশজ আয় বৃদ্ধির হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তার বর্তমান অবস্থান ২০ থেকে উন্নীত হয়ে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যাবে ২০২৬ সালের মধ্যে।

২. আনুপাতিক হারে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। পদ্মা সেতুর অন্যান্য ইতিবাচক সামাজিক প্রভাবের ফলে এই সূচকে আয় বৃদ্ধি আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আনুপাতিক মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি পেলে তা বছরে শতকরা তিন ভাগ হারে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার বছরান্তে দুই হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৮৯৮ মার্কিন ডলারে, যা টাকার অঙ্কে দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার।

৩. দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সংঘটিত হবে। যাতায়াতে সময় কমে যাবে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ যেসব স্থানে ঢাকা থেকে ভ্রমণে এখন আট ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়, যাতায়াতের সেই সময় কমে দাঁড়াবে চার ঘণ্টায়। এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে সরাসরি সংযুক্ত স্থানগুলোতে কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন, ক্ষমতায়ন আরো বেগবান হবে।

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম দশটি দেশের একটি। ৮৮ শতাংশ মানুষ ছিল দরিদ্র। বৈদেশিক সাহায্যের নির্ভরতাও ছিল ৮৮ ভাগ। বাংলাদেশ টিকে থাকবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন বাংলাদেশ হলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ। বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তুপের দাঁড়িয়ে শূণ্য হাতে সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) প্রণয়নের দ্বিতীয় বছরে ১৯৭৪-৭৫ সালে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাংলাদেশের জিডিপি ৯.৫৯ শতাংশে উন্নীত হয়, যা আজও পর্যন্ত রেকর্ড জিডিপি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ অন্ধকারে নিমজ্জ্বিত হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামরিক ও আধা গণতন্ত্রী শাসকরা স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতার অংশীদার করে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে দেশ শাসন করে। তাদের আমলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কখনোই ৪/৫ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। কিন্তু আমরা যদি ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসুরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনা সময়কালকে বিবেচনায় নেই তাহলে কি দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধুর পরে অর্থনীতি ও উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রকে তিনি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা কোভিড-১৯ মহামারির আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৮ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪১তম অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় এবার বিশ্বের কাছে বিস্ময় জাগানো আরও মাইলফলক অর্জন যোগ হতে যাচ্ছে আজ ২৫ জুন। এদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। পদ্মা শুধুই একটি সেতু নয়। এটি এক দিকে যেমন এক সময়ের ৮৮ ভাগ বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ইতিহাস সৃষ্টির সেতু অন্যদিকে তেমনি ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাহস ও সততার উদাহরণ সৃষ্টির সেতু। এ নিবন্ধের অবতারণা পদ্মা সেতু নির্মাণকে ঘিরেই।নিম্নে পদ্মা সেতু নিয়ে পুরো ইতিহাস লেখক হিসেবে তুলে দরলাম।

নির্মাণের ইতিহাস

১৯৯৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ও দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ৩,৬৪৩.৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার চওড়া এই সেতুটিকে দেশের সম্ভাব্য দীর্ঘতম সেতু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করার এবং ২০০৪ সালের জুনে শেষ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত পরিমাণ ২৬৯৩.৫০ কোটি টাকা বিদেশী উৎস থেকে এবং ৭৫০ কোটি টাকা জাতীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

২০০৬-২০০৭ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে, তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

২০০৮-০৯ সালে প্রকল্প প্রস্তুতির সাথে যুক্ত কিছু লোকের দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্যান্য দাতারা সেটি অনুসরণ করে। এই ঘটনায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ও সচিব মোশারেফ হোসেন ভূইয়াকে জেলে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে এমন কোনও অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডীয় আদালত মামলাটি বাতিল করে দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ পরবর্তীতে আদালতে খন্ডিত হয়। পরে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এইসিওএম-এর নকশায় পদ্মা নদীর উপর বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প 'পদ্মা বহুমুখী সেতুর' নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্টে। সে সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে তখন পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়ায় সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।[১১] বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের জন্য প্রাক যোগ্যতা দরপত্র আহবান করে। প্রথম পরিকল্পনা অনুসারে, ২০১১ সালের শুরুর দিকে সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল[১২] এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রধান কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা ছিল।[১৩] পরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্পটি তিনটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে- মুন্সীগঞ্জ (মাওয়া পয়েন্ট/উত্তর পাড়), শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর (জঞ্জিরা/দক্ষিণ পাড়)। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর।

নকশা

পদ্মা বহুমুখী সেতুর সম্পূর্ণ নকশা এইসিওএমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল তৈরি হয়। বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু প্রকল্প যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে।

কর্মপরিকল্পনা

পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয় যথা— (ক) মূল সেতু, (খ) নদী শাসন, (গ) জাজিরা সংযোগকারী সড়ক, (ঘ) টোল প্লাজা ইত্যাদি। মাওয়া সংযোগকারী সড়ক, টোল প্লাজা ইত্যাদি এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এলাকা। প্রকল্পে নিয়োজিত নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’ ভৌত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা দরের নথি প্রস্তুত, টেন্ডার আহ্বানের পর টেন্ডার নথি মূল্যায়ন, টেন্ডার কমিটিকে সহায়তাসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারক করত। ভৌত কাজের বিভিন্ন প্যাকেজের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি।

পাইলিংয়ের সমস্যা

প্রথম দিকে সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। তলদেশে স্বাভাবিক মাটি পাওয়া যায়নি। সেতুর পাইলিং কাজ শুরুর পরে সমস্যা দেখা যায়। প্রকৌশলীরা নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটির বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথার চেষ্টা করে। স্ক্রিন গ্রাউটিং নামের এই পদ্ধতিতেই বসানো হয় পদ্মাসেতু। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে রাসায়নিক নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বাড়ানো হয়। তারপর ওই মাটিতে পিলার গেঁথে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেওয়া হয়। পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় নদীর তলদেশের মাটিতে। কেমিক্যালের প্রভাবে তখন তলদেশের সেই মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। একপর্যায়ে সেই মাটি পাইলের লোড বহনে সক্ষম হয়ে ওঠে। তখন আর পাইল বসাতে কোনো বাধা থাকে না।

চুক্তিবদ্ধ সংস্থা

২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের কোম্পানিটি পদ্মাসেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায়। পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১০ সালে প্রথম দরপত্র আহবান করা হলে সেখানে প্রাক-যোগ্যত অর্জনের জন্য ৪০টি কোম্পানি অংশ নেয়। বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এডিবির তত্বাবধানে এদের মধ্যে ৫টি কোম্পানিকে বাছাই করা হয়। পরে বিশ্বব্যাংকের আপত্তির কারণে একটি কোম্পানি বাদ পড়ে যায়। আর্থিক প্রস্তাব আহ্বান করলে শুধুমাত্র চীনের এই কোম্পানিটি আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়।কোম্পানিটি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের অধীনস্থ।

২০২২ সালের এপ্রিলে সেতু বিভাগের অধীনে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নির্মাণ ব্যয়

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

ক্রমিক ব্যয়বৃদ্ধি

২০০৫ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিক প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১২,০০০ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় পৃথিবীর অন্যান্য তুলনীয় সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের নিরিখে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সর্বমোট নির্মাণ ব্যয় ১০,০০০ কোটি টাকায় সীমিত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।

২০০৭ সালের আগস্ট মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একনেক-এর সভায় পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত প্রাক্কলন ১০,১৬১ কোটি অনুমোদন করা হয়।

পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে প্রাক্কলন বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ অনুমোদিত প্রাক্কলনের পরিমাণ ৩০,১৯৩ কোটি টাকা যা মূল প্রাক্কলনের চেয়ে ২০,০৩২ কোটি টাকা বেশী। বলা হয়েছে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়াই প্রকল্প ব্যয় এতো বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ।

মার্কিন ডলারের হিসাবে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সড়ক-রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় এগারো বছরে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। চীনের ৬.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উফেনসাং ইয়াংজী সড়ক-রেল সেতু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই সেতুর নির্মাণে ৪ বছর লেগেছে এবং ব্যয় হয়েছে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার যা পদ্মা সেতুর এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।

নির্মাণের সময়ক্রম

মূল সেতুর জন্য চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনকে নিযুক্ত করা হয়। চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নদী শাসনের কাজ করে। বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেডকে দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের চুক্তি দেওয়া হয়। অক্টোবর ২০১৭ সালে মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

২০১৭

৩০ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে এই স্প্যান বসানো হয়।
১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান।
১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়।
২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়।

২০১৮

জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে।
২৮ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান ৭বি সুপার স্ট্রাকচার বসানো হয়। প্রথম স্প্যান বসানোর প্রায় চার মাস পর জাজিরার নাওডোবা প্রান্তে তিন হাজার ১৫০ টন ধারণ ক্ষমতার এ স্প্যান বসানো হয়।
মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসে সপ্তম স্প্যান।

২০১৯

২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়।
২২ মার্চ সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর বসে নবম স্প্যানটি।
১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর দশম স্প্যান।
২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে।
১৭ মে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিলারের ওপর ১২তম স্প্যান বসানো হয়।
২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর ১৩তম স্প্যান ৩বি বসানো হয়।
২৯ জুন ১৪তম স্প্যান বসানো হয়।
২২ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তে ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারের ওপর পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়।
২৭ নভেম্বর মাওয়া প্রান্তে ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর ১৬তম স্পানটি বসানো হয়।
২০১৯ সালেল ৫ ডিসেম্বর পিলার ২২ ও ২৩–এর ওপর মূল সেতুর ১৭তম স্প্যানটি বসানো হয়।
১১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১৮তম স্প্যান বসানো হয়।
১৮ ডিসেম্বর বসানো হয় ১৯তম স্প্যান।
৩১ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের উপরে বসানো হয় পদ্মা সেতুর ২০তম স্প্যান। ধূসর রঙের ‘৩-এফ’ নম্বরের স্প্যানটি খুঁটির উপরে বসানো হয়।

২০২০

১৪ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২১তম স্প্যান।
২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তের ৫ ও ৬ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২২তম স্প্যান।
২ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৩তম স্প্যান।
১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪তম স্প্যান।
২১ ফেব্রুয়ারি ২৫তম স্প্যান বসানো হয়।
১০ মার্চ পদ্মা সেতুর ২৬তম স্প্যান বসানো হয়। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় এই স্প্যান।
২০ এপ্রিল ২৭তম স্প্যানটি পিলার-২৭ ও ২৮-এর ওপর বসানো হয়।
১১ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তে বসানো হয় ২৮তম স্প্যান।
৪ মে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১৯ ও ২০তম পিলারের ওপর ‘৪এ’ আইডি নম্বরে সেতুর ২৯তম স্প্যান বসানো হয়।
৩০ মে জাজিরা প্রান্তে সেতুর ২৬ ও ২৭ নম্বর পিলারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয় ৩০তম স্প্যান।
১০ জুন পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ২৫ ও ২৬ নম্বর পিয়ারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৫-এ স্প্যান বসানো হয়।
১১ অক্টোবর পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যানটি বসানো হয়। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রথম দিন বসানো সম্ভব না হলেও প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় দিনে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। বন্যা ও পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যানটি বসানো হয় চার মাস পর।
২০ অক্টোবর বসানো হয় সেতুর ৩৩তম স্প্যান।
২৫ অক্টোবর ৩৪তম স্প্যান বসানো হয় সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৭ ও ৮ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ২-এ।
৩১ অক্টোবর ৩৫তম স্প্যান বসানো হয় মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ২-বিতে।
৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর ৩৬তম স্প্যান বসানো হয় সেতুর মাওয়া প্রান্তের ২ ও ৩ নম্বর পিলারের ওপর।
১৩ নভেম্বর ৩৭তম স্প্যান ‘২-সি’ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৯ ও ১০নং পিলারের ওপর বসানো হয়।
২১ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৮তম স্প্যানটি সফলভাবে বসানো হয়।
২৭ নভেম্বর ৩৯ তম স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। স্প্যানটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের ওপর ‘২-ডি’ স্প্যানটি বসানো হয়।
৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় সেতুর ছয় হাজার মিটার।
১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ তম পিলারে ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু।

২০২১

২৩ আগস্ট সর্বশেষ সড়ক স্ল্যাব বসানো হয়।

২০২২

৪ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে সেতুর ৪১৫ বাতির পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৪ জুন একযোগে সবগুলো বাতি জ্বালানো হয়।

২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করবেন। পরিশেষে বলতে চাই, গত ১৩ বছরে যারা শেখ হাসিনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন তারা এ কথা অস্বীকার করতে পারবেন না যে নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। তার নেতৃত্বের গুণাবলী শুধু দেশের জনগণের মধ্যে প্রশংসিত হয় নি, বরং তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছেন বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশের নেতা থেকে তিনি বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের ভেতরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর ক্ষমতায়নসহ অনান্য বিষয়ে তিনি সব সময় সরব থেকেছেন বিধায় আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বড় বড় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা তার কাজের প্রশংসা করেছেন। এমনকি তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেতারা প্রশংসা করেছেন। কোভিড-১৯ মোকাবেলাই সরকারের সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন গত ১৩ বছর। আর বাংলাদেশের ১৮কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আজকের যে অবস্থান সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের কারনে। তবে তার এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছে সরকারের ধারাবাহিকতা কারণ বাংলাদেশের মতো দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশের জনগণ তার ওপরে আস্থা রেখে তাকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আগামী ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ একই রকমভাবে তার উপরে বিশ্বাস রাখবে কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সকলের মাথায় যে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। ফলে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন উন্নত দেশের অভিমুখে ধাবমান।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।