স্টাফ রিপোর্টার : সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধনের সুযোগ বা পথশিশুদের জন্মসনদ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জন্মনিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধনের ব্যবস্থা নিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল ও জর্জ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জানান, সরকার সবার জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু দেশের সুবিধাবঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনো জন্মনিবন্ধনের বাইরে। নানা জটিলতার কারণে পথশিশুসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মসনদ পাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধনের সুযোগ আছে বললেও বাস্তবে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

তাই দেশের ১৬ লাখ পথশিশুকে জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারিসহ নির্দেশনা দেন।

আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, পথশিশুদের জন্মসনদ না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পথশিশুদের জন্মসনদ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পাশাপাশি পথশিশুদের জন্মসনদ দিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আগামী তিন মাসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পথশিশুদের জন্মনিবন্ধনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিটের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার সবার জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু দেশের সুবিধাবঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনো জন্মনিবন্ধনের বাইরে। নানা জটিলতার কারণে পথশিশুসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মসনদ পাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধনের সুযোগ আছে বললেও বাস্তবে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

তাই দেশের দুই লাখ পথশিশুকে জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট সংগঠনের পক্ষে গত সপ্তাহে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এ রিট আবেদন করেন। রিটে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব, জন্মনিবন্ধন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১২ জুন আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এই রিট আবেদনটি করেন।

রিটের বিষয়ে আইনজীবী জানান, বাস্তবতা হলো, শিশুর পিতা-মাতার পরিচয় ও ঠিকানা না থাকা, শিশুর ধর্ম নির্ধারণ করতে না পারা, নিবন্ধন নিয়ে শিশুর অজ্ঞতা ও ফি দিতে না পারায় তাদের নিবন্ধন করা হয়ে ওঠে না। আবার নিবন্ধন ফরমে নাম, পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানার জন্য পৃথক ক্রম থাকলেও পথশিশুদের তথ্যসংবলিত কোনো ক্রম রাখা হয়নি। যারা পথশিশু তাদের অনেকের পরিচয় ও বাসস্থান নেই।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১৮ সালের জন্ম/মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পিতৃপরিচয়হীন, এতিম শিশুর জন্মনিবন্ধন করা যাবে। তথ্যের ঘাটতির কারণে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক জন্ম বা মৃত্যুর নিবন্ধন প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না।

ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জানান, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুই লাখের বেশি পথশিশু রয়েছে। এসব শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকার কারণে পথশিশুরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকার কারণে শিশুরা অনেক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে রিট দায়ের করেছি।

(ওএস/এসপি/জুন ৩০, ২০২২)